আজঃ রবিবার ২৪-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

মধ্যপ্রাচ্য: গুডবাই আমেরিকা, হ্যালো চীন?

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ০৯ জুন ২০২৩
  • / পঠিত : ১৫৪ বার

মধ্যপ্রাচ্য: গুডবাই আমেরিকা, হ্যালো চীন?

ডেস্ক: সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে সৌদি আরব। একই সঙ্গে সম্পর্কে ফিরেছে সিরিয়ার সঙ্গেও। এর মধ্য দিয়ে ইয়েমেনেও যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আর এসবে মধ্যস্থতা করেছে এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন।

সৌদি-ইরানের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই গুঞ্জন ওঠে মধ্যপ্রাচ্যে ভালো অবস্থানে নেই আমেরিকা। এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও।

বিষয়টি নিয়ে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা ‘আল-জাজিরা’য় একটি মতামতধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। এটি লিখেছেন মারওয়ান বিশারা।

নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা থেকে উদ্ধারে সৌদি আরবে তিন দিনের সফর এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ছিল শেষকথা। কৌশলগত অংশীদারির ছত্রছায়ায় যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সাথে সামরিকভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু, এবারের সফরে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ এগিয়ে নেওয়াটা ব্লিংকেনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

উপসাগরীয় ধনাঢ্য আরব দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)। গত বছরের জুলাইয়ে জিসিসির শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় তিনি ঘোষণা করেন, “যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে গিয়ে এমন শূন্যতা তৈরি করবে না, যার সুযোগ নেবে চীন, রাশিয়া বা ইরান।” কিন্তু, বাইডেনের অঙ্গীকারের পরও ঠিক তেমনটাই ঘটছে মধ্যপ্রাচ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে তার আরব মিত্ররা তেহরান ও বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন এবং মস্কোর সাথে জোরালো সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে ‘হাইব্রিড’ নীতি গ্রহণ করেছে।

সৌদি-ইরানের মধ্যে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি হয় চীনের মধ্যস্থতায়। বাইডেন প্রশাসন যদিওবা প্রকাশ্যে এ চুক্তির গুরুত্বকে খাটো করে দেখিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, তবুও তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান এই প্রভাবে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা, তৎপরতা সহজেই চোখে পড়ে।

গত দুই দশকে নিজস্ব তেল ও গ্যাস সম্পদের উত্তোলন বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে উপসাগরীয় তেলের খুব বেশি দরকার হয়তো তার নেই, তারপরও এই অঞ্চলের মোড়ল হিসেবে নিজ অবস্থান ধরে রাখতে চাইছে– যাতে চীনের সাথে যেকোনও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বেইজিংকে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

গত মাসেই এক হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্লিংকেন বলেন, “আমাদের সামনে সবচেয়ে গুরুতর ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীন; দেশটির সেই অভিপ্রায় আছে এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত একটি অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সক্ষমতাও বাড়ছে চীনের।”

কিন্তু, ওয়াশিংটনের গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার চেয়ে বেইজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোই হয়তো উপসাগরীয় দেশগুলোর স্বৈরাচারী শাসকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।

বিষয়টি চোখ টাটাচ্ছে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের। যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক মর্যাদাও জড়িত মধ্যপ্রাচ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখার ওপর। একইসঙ্গে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের আরও অন্যান্য অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাবও যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুচাপ বাড়িয়েছে।

আরব দেশগুলোর এই অস্পষ্ট পররাষ্ট্রনীতিতে হতাশ ও বিরক্ত বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের কিছু রাষ্ট্রের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। মার্কিন সরকারের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে, এটা তারই ইঙ্গিত।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে রাশিয়াকে সাহায্য না দিতে এসব দেশকে হুঁশিয়ার করেছে ওয়াশিংটন। বলেছে, যেকোনও এক পক্ষে থাকতে হবে তাদের, নইলে যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ জোট কঠিন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।

বরং তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ এখনও পর্যন্ত গ্রাহ্য করেনি সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল সৌদি আরব উৎপাদন বাড়ালে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা কমবে। এতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিরূপ প্রভাব অনেকটাই কমবে মিত্র দেশগুলোর ওপর।

সৌদি আরব তো তা করেইনি, উল্টো মস্কোর সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়েও গররাজি রিয়াদ। সৌদির নেপথ্য শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ দেখাচ্ছেন– তাতে এই অঞ্চলে তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই বাড়ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- তাদের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশর অন্যতম- সম্প্রতি চীনের নেতৃত্বাধীন ব্রিকস গ্রুপে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও এটি হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, আমেরিকা গুড বাই জানিয়েছে এখন চীনকেই হ্যালো চলছে মধ্যপ্রাচ্য। সূত্র: আল জাজিরা

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba