যুক্তরাজ্যে নেওয়ার কথা বলে বিএইচআরসির প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৭

যুক্তরাজ্যে মানবাধিকার কনভেনশন-২০২৩ এ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের (বিএইচআরসি) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব মো. সাইফুল ইসলাম দিলদার (৬৫), বাদল মোল্লা (৪০), রুহুল আমিন (৪৩), মো. তাজউদ্দিন (৪৮), সুচি আফরিন (২৬), মো. কাইয়ুম (৩৫) ও মো. তামিম আহমেদ (১৭)।

সোমবার (১২ জুন )বিকেলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক।

তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামে একটি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা বিভিন্নভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইন বলে মানবাধিকার 'কমিশন' হিসেবে কমিশন শব্দটি শুধুমাত্র জাতীয় মানবাধিকার কমিশন লিখতে পারবে। সেই আলোকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামীয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট করলে হাইকোর্ট থেকে 'কমিশন' শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য আসামি সাইফুল ইসলাম দিলদারের ওপর নির্দেশ আসে। কিন্তু তিনি নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে জনসাধারণের সাথে ক্রমাগত প্রতারণা করে চলছে। আদালত সংস্থাটির নামের শেষে 'কমিশন' ও সংক্ষেপে 'বিএইচআরসি' শব্দ দুটি কোথাও ব্যবহার করতে পারবে না প্রদান করা সত্ত্বেও উক্ত আদেশ অমান্য করে ক্রমাগত তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটের www.nhrc.org.bd আদলে (http:/ww/w.bhrc-bd.org/) ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান, তারা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে যুক্তরাজ্য মানবাধিকার কনভেনশন ২০২৩ নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হবে বলে লোক সংগ্রহ করছে। পরে বিজ্ঞাপনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইন বিভাগের আখতারুজ্জামান অফিসে অবস্থান করাকালীন তার নজরে আসে। আসামি সাইফুল ইসলাম দিলদার তাদের ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে সদস্য পদ সংগ্রহ বিভিন্ন দেশে লোব পাঠানোর কমিটি গঠন ইত্যাদি প্রচার করে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এ ঘটনায় আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ কমিশন লেখা ২০ ভিজিটিং কার্ড, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিভিন্ন ব্যক্তির ৯৬টি আইডি কার্ড, ১০টি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের গাইডলাইন বই, একটি কর্মকর্তা কর্মচারীর তালিকা, ১১টি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বিভিন্ন ধরনের সিল, একটি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কালো কটি জ্যাকেট, ১৫টি সদস্য ফরম, ২০টি ক্যালেন্ডার, একটি মানি রিসিট বই, তিনটি সিপিইউ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লোগো ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।

আজিমুল হক আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কমিশন শব্দ ব্যবহার, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করে সদস্য সংগ্রহ, বিদেশের লোক পাঠানোর নামে টাকা নেওয়া ও প্রতারণ অধ্যায় স্বীকার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের আরও সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। 

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রিমান্ডে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ সময় তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান, শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া, তেজগাঁও থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) অপূর্ব বর্মন, শেরেবাংলা নগর থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এস আই) রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।