আজঃ বৃহস্পতিবার ১৯-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

ঘূর্ণিঝড় মোখা, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: রবিবার ১৪ মে ২০২৩
  • / পঠিত : ১৯০ বার

ঘূর্ণিঝড় মোখা, চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি

চট্টগ্রাম, ১৩ মে, ২০২৩  : ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। উপজেলা ও নগরীর উপকূলবর্তী ওয়ার্ড থেকে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এসব এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে আজ সন্ধ্যার মধ্যেই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম আজ দুপুরে বাসস’কে জানান, ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও পানিসহ আমাদের ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত। আরবান ১৫শ ও রেডক্রিসেন্টের ২২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আজ সকাল থেকে নগরীর সাগর ও নদী উপকূলবর্তী ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরেছেন। তিনি নিজেও কিছু কিছু এলাকায় মাইকে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। লোকজনকে সন্ধ্যার মধ্যে নিকটবর্তী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলেছেন।’ 
আবুল হাশেম বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। লোকজন নিজে থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে না এলে রাতের মধ্যে তাদের জোরপূর্বক নিয়ে আসা হবে। এছাড়া, নগরীর খুলশীসহ পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকেও সরিয়ে নেয়া হবে। কেননা, বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে।’   
ঘূর্ণিঝড় মোখা’য় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করায় ইয়ার্ড ও জেটির সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দর ও মাদার ভেসেলের নিরাপত্তার স্বার্থে জেটিতে অবস্থানরত ২০টি ও বহির্নোঙ্গরের ৬০টি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অতি জোরালো ঢেউয়ে জাহাজ ভারসাম্য হারিয়ে বা নোঙ্গর ছিঁড়ে জেটিতে ধাক্কা দিতে পারে। এতে জেটি ও জাহাজ দু’টিরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। কিন্তু গভীর সাগরে মাদার ভেসেলগুলো ইঞ্জিন চালু রাখলে ঘূর্ণিঝড় বা এ কারণে সৃষ্ট বড় ঢেউ জাহাজের ক্ষতি করতে পারে না। সব লাইটার জাহাজ ইতিমধ্যে সদরঘাট, কর্ণফুলী সেতু ও কালুরঘাট সেতুর কাছাকাছি নদীতে অবস্থান নিয়েছে। বন্দরের জেটিতে অপারেশনাল ইকুইপমেন্ট ভালো করে বেঁধে নিরাপদে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্দরের মেরিন, নিরাপত্তা, ট্রাফিক ও সচিব বিভাগের পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চল তাদের পতেঙ্গা নৌঘাঁটিসহ সব স্থাপনা ও সরঞ্জামের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জরুরি অভিযানের জন্য ২টি হেলিকপ্টার ও ছোট-বড় ২১ টি নৌযান প্রস্তুত রেখেছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আজ সকাল থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সকল ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। 
বিমানবন্দরের পরিচালক, গ্রুপ কমান্ডার তাসলিম আহমেদ জানিয়েছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের  প্রেক্ষিতে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদ এড়াতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। 
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতের আশঙ্কায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, আমরা  ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তৎপরতা দ্রুত শুরু করার জন্য ২৮৪টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি করে মোট ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে জন্য একটি করে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৯ আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি রয়েছে। 
চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলা ও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গৃহীত সার্বিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আকমল আলী ঘাট, রাসমনি ঘাট ও পতেঙ্গার উপকূলবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৪-৫ হাজার জেলে পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকু- ও মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইন মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন। 
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তাদের ২৫ ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে। দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। 
ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে সতর্কতামূলক মাইকিং চালিয়ে যাচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে সার্চ এন্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত হাজারও ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 
এদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোখা’র কারণে সতর্কতা হিসেবে আগামীকালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, অন্যান্য পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী চলবে। 

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba