আজঃ শুক্রবার ২০-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

কেশবপুরের শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কমিটি ছাড়াই চলছে তিন বছর

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: রবিবার ০৯ জুলাই ২০২৩
  • / পঠিত : ১৮২ বার

কেশবপুরের শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কমিটি ছাড়াই চলছে তিন বছর

যশোরের কেশবপুর উপজেলার শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে একটি ‘প্রভাবশালী চক্র’ দীর্ঘদিন ধরে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এই চক্রের কারণেই প্রায় তিন বছর ধরে কোন কমিটি ছাড়াই চলছে বিদ্যালয়টি। ফলে, এই হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।


‘প্রভাবশালী ওই চক্রটি’ নিজেদের আজ্ঞাবহ কাউকে সভাপতি করে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি করে দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসি চাচ্ছেন ভোটের মাধ্যমে সাধারণ অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এলাকার যোগ্য কাউকে সভাপতি করে কমিটি করতে। কিন্তু ‘প্রভাবশালী ওই চক্রটি’র কারণে বারবার সে চেষ্টা ভেস্তে যাচ্ছে।


সর্বশেষ আগামী ১৬ জুলাই ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী দুটি প্যানেলে দুইজন মহিলাসহ ১০ জন অভিভাবক সদস্য পদের জন্য প্রতিটি মনোনয়নপত্র ২০০০ টাকা করে কিনে নির্ধারিত ২৭ জুন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দেন। এরপর প্রিজাইডিং অফিসার মনোনয়নপত্র যাচাই অন্তে ১০ জন অভিভাবক সদস্য ও ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ১৩ জনের বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। এরা হলেন, মো. আজগর আলী ভোটার নং-১১৫, মো. আব্দুস সামাদ ভোটার নং-৮৫, পরিমল বিশ্বাস ভোটার নং-৯৬, মো. বাবু হোসেন ভোটার নং-২৫, মো. মনিরুজ্জামান ভোটার নং-১১০, মো. রবিউল ইসলাম ভোটার নং-১১৭, শ্যামল দাস ভোটার নং-৫৯, মো. সোলাইমান হোসেন ভোটার নং-২৪, মোছা. তানজিলা খাতুন ভোটার নং-৬৬ ও রেখা বেগম ভোটার নং-৭৮ এবং ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি হলেন, অরুণ কুমার মালাকার ভোটার নং-০৮, এমডি লুৎফর রহমান ভোটার নং-০৬ ও ফেরদৌসী খাতুন ভোটার নং-১৩। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিলো।

গত ৫ জুলাই ছিলো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন। ‘প্রভাবশালী ওই চক্রটি’ আগেরদিন থেকে তৎপরতা শুরু করে। প্রার্থীদের কেশবপুরের ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অফিসে’ হাজির হতে বলা হয়। সেখানে শিক্ষকসহ দু’একজন অভিভাবক গেলেও বাকীরা কেউ যাননি। না যাওয়ার কারণটাও বেশ ভয়াবহ।


এ ব্যাপারে অভিভাবক সদস্য আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সকালে আমিসহ কয়েকজন কেশবপুর আ.লীগ অফিসে এসেছিলাম সভাপতিকে বলে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণভাবে করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে। এক পর্যায়ে শিক্ষক প্রতিনিধি প্রার্থী অরুণ মালাকার বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছিলেন ‘ভিন্ন ওই অফিসে’ যাওয়ার জন্য। ওখানে কেন যেতে হবে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, ওখানে হেড স্যারসহ আরও অনেকেই বসে আছেন, ভোট না করে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করা যায় কিনা সেই বিষয়ে একটু কথা বলবে। আমি ‘পূর্ব অভিজ্ঞতা’ থেকে আলামত খারাপ বুঝতে পেরে তাকে বলি আপনি যান আমরা আসছি। এক পর্যায়ে একসাথেই উপজেলা পরিষদের দিকে এসে ওই শিক্ষককে ‘ভিন্ন ওই অফিসের’ সামনে নামিয়ে দিয়ে আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে যেয়ে বৈধ প্রার্থী তালিকা নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। এরপর বিভিন্ন নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিয়ে ওই অফিসে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিলো। এক পর্যায়ে আমি ফোন বন্ধ করে রাখি।’ যাননি কেন জানতে চাইলে আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ওখানে গেলে আমাদের দুই প্যানেল থেকে ৫ জন রেখে বাকীদের জোরপূর্বক মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করানো হতো এবং ওই চক্রের নির্ধারিত ব্যক্তিকে সভাপতি বানিয়ে কমিটি করে দিবে এমন একটা খবর আমার কাছে এসেছিলো, সেই কারণে আমি যাইনি। ওইদিন রাতেও আমার বাড়িতে ওই চক্র লোক পাঠিয়েছিলো আমাকে নিয়ে যেতে। এখনো পর্যন্ত আমাকেসহ আমার সাথে সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে আব্দুস সামাদের সাথে থাকা আবুল কালাম বলেন, ‘ইতিপূর্বে কমিটি করার সময় আমি প্রার্থী ছিলাম। ‘প্রভাবশালী এই চক্রটি’ ভুল বুঝিয়ে একইভাবে আমাদের ডেকে এনে কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছিলো এবং নিজেদের মতো সভাপতি বানিয়ে কমিটি করে দিয়েছিলো। এবারো একইভাবে ফাঁদ পেতেছে বুঝতে পেরে আমরা যাইনি। স্কুলে ৩টি শূন্য পদ রয়েছে, ওই চক্রটি নিজেদের মনমতো কমিটি করে নিয়োগ বাণিজ্য করবে। ওই সুযোগ দিবো না, আমরা ভোট করেই কমিটি করবো।’

এদিকে, গত ০৬ জুলাই ছিলো চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ জুলাই পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এবং কোন প্রার্থীও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।


এ ব্যাপারে আব্দুস সামাদ বলেন, ‘যেহেতু আমরা কেউ মনোনপত্র প্রত্যাহার করিনি এবং নির্ধারিত দিনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি, ফলে আমরা আশংকা করছি, আমাদের প্রার্থীদের জোরপূর্বক ধরে নিয়ে ‘ব্যাকডেটে’ স্বাক্ষর করে নিয়ে কিছু একটা করতে পারে ওই চক্রটি।’

আব্দুস সামাদ আরও বলেন, ‘ইতিপূর্বেও নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করা হয়েছিলো। সবকিছুই নিয়ম অনুযায়ী চলছিলো, হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই ভোটের আগের দিন চিঠি দিয়ে ভোট স্থগিত করা হয়। আজও সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার বা ভোট বাতিল করা হয়নি। করলেও সেটা আমাদের জানানো হয়নি। ওই সময় যারা মনোনয়পত্র ক্রয় করেছিলো তাদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও ফেরত দেননি প্রধান শিক্ষক। তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি বলেন, ওটা পরে দেখা যাবে।’


এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেনের কাছে শনিবার মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত (০৮ জুলাই শনিবার পর্যন্ত) কোন অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী তাদের মনোনয়ন বা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি।’ জানতে চাওয়া হয়, ০৬ জুলাই ছিলো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের নির্ধারিত দিন, প্রকাশ করা হয়েছে কিনা-তিনি বলেন, ‘কোন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।’ এছাড়া ইতিপূর্বে স্থগিত হওয়া ভোট বাতিল করা হয়েছে কিনা এবং ওই সময়ের প্রার্থীদের টাকা ফেরত দেয়া এবং তাদের জানানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ওটাতো ওই সময় বাতিল করা হয়েছে, আমি কি বাড়ি বাড়ি যেয়ে টাকা ফেরত দিয়ে জানায়ে আসবো নাকী, তিনি আরও বলেন, ‘টাকা ফেরত নিতে বা কোন কিছু জানতে হলে তো আমার অফিসে আসতে হবে, আমার কাছে আসলে টাকা ফেরত দেয়া হবে।’


এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশীদের কাছে শনিবার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত (৮ জুলাই শনিবার) কোন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। এছাড়া চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি, পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ জানতে চাওয়া হয় পূর্বে ভোট বাতিল করা হয়েছে, ওই সময়ের প্রার্থীরা টাকা ফেরত পাবেন কিনা, তিনি বলেন, ‘ওই সময় প্রধান শিক্ষককে প্রার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলা হয়েছে।’


ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba