আজঃ বৃহস্পতিবার ১৯-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

২২ দিনে একে একে তিন মেয়েকে হারালেন মিঠুন-আরতি

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বৃহস্পতিবার ১৩ জুলাই ২০২৩
  • / পঠিত : ১৫৯ বার

২২ দিনে একে একে তিন মেয়েকে হারালেন মিঠুন-আরতি

ডেস্ক: একটি অগ্নি দুর্ঘটনায় একে একে তিন মেয়েকেই হারালেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সেবক হরিজন সম্প্রদায়ের মিঠুন দাশ ও আরতি দাশ দম্পতি। গত ২০ জুন নিজ ঘরে সংঘটিত এ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয় তাদের চার মেয়ে। তাদের সবাইকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া একটি মেয়েকে সৎকারের জন্য যখন শ্মাশানে ছোটাছুটি করছিলেন বাবা; তখন আর দুই মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে হাসাপাতালে। সৎকার শেষে শয্যশায়ী মেয়েদের পাশে উপস্থিত হয়ে তাদের বাঁচানোর যুদ্ধ শুরু করেন। ২২ দিনের যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তিন মেয়েকেই হারান এই দম্পতি।

সর্বশেষ বুধবার সকালে মারা যায় হ্যাপি রাণী দাশ। এর আগে ২৪ জুন মারা যায় সাখশী রাণী দাশ (১৩), ৩০ জুন মারা যায় সারথী রাণী দাশ (১৭)। সবচেয়ে ছোট মেয়ে আড়াই বছর বয়সী সুইটি রাণী দাশ বেঁচে আছে। আগুন থেকে এই ছোট বোনকে বাঁচাতে গিয়েই অপর তিন বোনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

বুধবার মারা যাওয়া হ্যাপি দাশের লাশ ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট থেকে রাত ১১টায় আনা হয় সেবক কলোনিতে। ধর্মীয় আচার সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার সকালেই বলুয়ার দিঘির শ্মশানে তার লাশ সৎকার করার কথা রয়েছে।

একই পরিবারের তিন মেয়েকে হারানোর মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি কলোনির কেউ মেনে নিতে পারছেন না। বুধবার রাতে লাশ আনার পর সেবক কলোনিতে নামে শোকের ছায়া। বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন আরতি দাশ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কেউ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

নিহত তিন বোনের মধ্যে সারথী পাথরঘাটা মেনকা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম, সাখশী মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এবং হ্যাপি আশরাফ আলী রোডে অবস্থিত সানরাইজ গ্রামার স্কুলের কেজির ছাত্রী ছিল।

আগুনে দুই মেয়ের মৃত্যুর পর তাদের বাবা মিঠুন দাশের সঙ্গে কথা হয়েছিল প্রতিবেদকের। কিন্তু দুই মেয়ে হারানো মিঠুন দাশ তখন এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান প্রতিবেদককে। তার ভয় ছিল এমনিতেই তিনি দুই মেয়েকে হারিয়েছেন। আরও দুই মেয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। এটি স্রেফ দুর্ঘটনা হলেও সংবাদ প্রকাশ হলে ঘটনাকে কে কোন দিকে নিয়ে যায়, কোন ঝামেলায় পড়েন, থানা-পুলিশের টানাটানিসহ নানা ভয়ে তিনি এমন অনুরোধ করেছিলেন। একে একে তিন মেয়েকে হারানোর পর তিনি এখন নির্বাক। 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিঠুন দাশ ও আরতী দাশ ২০ জুন ভোরে পরিচ্ছন্নতার কাজে বাসা থেকে বের হন। আরতি দাশ তার এক মেয়েকে বলে যান ছোট মেয়ে সুইটির ঘুম ভাঙলে বা কান্না করলে তাকে যেন দুধ গরম করে খাওয়ানো হয়। মেজো বোন সাখশী সকালে গ্যাসের চুলায় দুধ গরম করে ছোট বোনকে খাওয়ায়। কিন্তু চুলা বন্ধ না করেই চুলার ওপর ডেকচি রেখে সুইটির পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক পর আবার ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করতে যায় সাখশী। দিয়াশলাইর কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। তখন বড় তিন বোনই ঘুম থেকে উঠে যায়। তারা ছোট বোনকে বাঁচাতে তিন দিক থেকে আগলে রাখে। এরই মধ্যে ঘরের চালায় দেওয়া পলিথিন পুড়ে আগুনসহ তাদের গায়ে পড়তে থাকে। এ সময় তিন বোনের আর্ত চিৎকারে স্থানীয় লোকজন দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে চার বোনকে উদ্ধার করে। আশপাশের লোকজন মিলে আগুন নেভায়। দগ্ধ চার বোনকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কেবল সুইটি ছাড়া অন্য তিনজনের শরীর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, সেবক কলোনিটি তার ওয়ার্ডেই। দগ্ধ চার বোনের মধ্যে চমেক হাসপাতালে ২০ জুন প্রথমে মারা যায় সাখশী দাশ। অন্য দুই বোনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সবার ছোট আড়াই বছর বয়সী সুইটি সামান্য দগ্ধ হয়ে বেঁচে গেলেও একে একে তিন বোনই মারা গেল। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার কোন সান্ত্বনা নেই।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba