আজঃ শুক্রবার ২২-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

পানীয় বোতল ও কার্পেটের শুক্রাণু থেকে ৪০ বছর পর ধরা পড়ল খুনি!

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: রবিবার ১৪ মে ২০২৩
  • / পঠিত : ১৮১ বার

পানীয় বোতল ও কার্পেটের শুক্রাণু থেকে ৪০ বছর পর ধরা পড়ল খুনি!

ডেস্ক: ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে খুন করে ৪০ বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিয়েছিলেন ডেভিড ডয়িন আন্ডারসন নামের এক ব্যক্তি। কেউ তার টিকিরও খোঁজ পাননি। শেষ পর্যন্ত পানীয়ের ক্যানের উপর লেগে থাকা ডিএনএ সমাধান করল চার দশকের পুরনো রহস্যের। ধরা পড়লেন সিলভিয়া মায়ে কোয়েলের এই খুনি। কলোরাডোর হাড়হিম করা খুনের ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। যে পথে সমাধান হল রহস্যের, তা আপনার অন্তরের গোয়েন্দাকে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য।

১৯৮১ সালের ৪ অগস্ট নিজের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন ৩৪ বছরের সিলভিয়া। তার আগে চলেছিল যৌন নিগ্রহ। অবশেষে তার খুনে গ্রেফতার করা হয় আন্ডারসনকে। এখন তার বয়স ৬২ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার বাসিন্দা। আর শেরিলের বাড়ি ছিল ডেনভার থেকে কিছু দূরে চেরি হিলস গ্রামে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কোনও কারণ ছাড়াই সিলভিয়াকে খুন করেছিলেন ডেভিড। কেউ আবার বলেন, অন্য এক অপরাধ গোপন করতেই এই খুন।

২০২১ সালে নেব্রাস্কা থেকে গ্রেফতার হন ডেভিড। জেনেটিক জেনিয়োলজি প্রযুক্তিই ধরিয়ে দেয় তাকে। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এই তদন্ত চালিয়েছিল। সিলভিয়ার মৃত্যুস্থল থেকে সংগৃহীত নমুনার উপর লেগে থাকা ডিএনএর সঙ্গে মিলে গিয়েছিল নরম পানীয়ের একটি ক্যানের উপর লেগে থাকা ডিএনএ। ধরা পড়েন অভিযুক্ত।
৪০ বছর পর সেই ডিএনএর নমুনাই মিলিয়ে দিল ডেভিডকে। হাতেনাতে ধরা পড়লেন তিনি। সিলভিয়ার বোন জানিয়েছিলেন, পুলিশের এই পদক্ষেপে তিনি খুশি। অবশেষে তার বোনের আত্মা শান্তি পেল।

সিলভিয়ার সমাধিফলকের উপর লেখা, সৌন্দর্য, যা দেখা যায়, তা কখনওই হারায় না। সিলভিয়ার পরিচিতরা এই কথার সঙ্গে সহমত। তারা সিলভিয়ার মৃত্যুর ৪০ বছর পরেও ভুলতে পারেননি সেই নিষ্পাপ সৌন্দর্য।

মামলা চলার সময় এজলাসে পর্দায় বার বার ভেসে উঠেছিল সিলভিয়ার ছবি। দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন তার পরিচিতরা। কেঁদে ফেলেছিলেন বোন। সিলভিয়া একটি স্থাপত্যশিল্পের দফতরে সহকারীর পদে কাজ করতেন। দারুণ রাঁধতে পারতেন। বিয়ের কেক তৈরি করে বিক্রি করতেন তিনি।

দিনরাত কাজে ব্যস্ত থাকতেন সিলভিয়া। তার মাঝেও বন্ধুদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে ভুলতেন না। এক বন্ধু জানিয়েছেন, কারও টাকার প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসতেন সিলভিয়া। নিজের কাছে এক ডলার থাকলে তা-ও দান করে দিতেন।

তদন্তকারী অফিসার টবরেয়া জানিয়েছেন, খুব সুন্দর মাটির পাত্র তৈরি করতে পারতেন সিলভিয়া। নিজের বোনকে খুব ভালবাসতেন। টবরেয়া জানান, পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন সিলভিয়া। বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে মাত্র ১৫০ ফুট দূরে থাকতেন তিনি। রোজ সকালে বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে চা খেতেন। আড্ডা দিতেন।

সিলভিয়ার বাবাই প্রথম মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেন। সে দিন ছিল ১৯৮১ সালের ৪ আগগস্ট। সকাল গড়িয়ে গেলেও মেয়ে চা পান করতে আসেনি। বাবা গিয়েছিলেন মেয়ের বাড়ি। সকাল তখন ৮টা। ঢুকে যা দেখেছিলেন, নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়।

সিলভিয়ার ঘরে ঢুকে তার বাবা দেখেন, মেঝেতে উল্টে পড়ে রয়েছে মেয়ের নগ্ন দেহ। মুখে তোয়ালে জড়ানো। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পুলিশ ঘরে ঢুকতেই মৃত মেয়ের মুখ থেকে তোয়ালে নিয়ে নগ্ন শরীরে উপর বিছিয়ে দেন বাবা। পুলিশ লক্ষ্য করে, সিলভিয়ার মাথার পিছনে রয়েছে গুলির দাগ। পিঠে ছিল কোপানোর চিহ্ন। শরীরে যৌন নিগ্রহের চিহ্ন স্পষ্ট।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ৩ আগস্ট রাত ১১টায় শেষ বার বোনের সঙ্গে কথা হয়েছিল সিলভিয়ার। সকাল ৮টায় তার বাবা এসে মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পুলিশের ধারণা ছিল, যা হয়েছে, ওই মাঝের ন’ঘণ্টায়।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই মৃত্যুর কারণ। গুলি মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ নয়। রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে খুন করা হয়েছিল সিলভিয়াকে। তার নখগুলি উপড়ে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশের অবশ্য অনুমান ছিল, বাধা দিতে গিয়েই নখ ভেঙে গিয়েছিল তার।

সিলভিয়ার বসার ঘরে টেলিফোনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা ছিল। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল সেই ঘর। ঘটনাস্থল থেকে ১৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায় পুলিশ। ঘরের কার্পেটে পড়েছিল অভিযুক্তের শুক্রাণুও। সেই নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।

ইতিমধ্যে খুনের দু’বছর পর ধরা পড়েন সিরিয়াল কিলার ওটিস এএলুড টুল। তিনি দাবি করেন, সিলভিয়াকে তিনিই খুন করেছেন। একাধিক খুনের মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে টেক্সাসের জেলে মৃত্যু হয় তার। দেখা যায়, সিলভিয়ার বাড়িতে ডিএনএর যে নমুনা মিলেছিল, তার সঙ্গে মিলছে না টুলের ডিএনএর নমুনা।

১৯৯৫ সালে সিলভিয়ার কার্পেটে মেলা শুক্রাণুর নমুনা কলোরাডোর এক কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। দীর্ঘ কয়েক বছরের অপেক্ষা। অবশেষে পরীক্ষাকারী সংস্থা জানিয়েছিল, সেই শুক্রাণু ডেভিড ডয়িন অ্যান্ডারসনের। তিনি সিলভিয়ার বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকতেন। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ২২ বছর।

এর পরেই ডেভিডের উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। বাড়ির বাইরে আবর্জনা ফেলে গিয়েছিলেন তিনি। সেই আবর্জনা কুড়িয়ে আনেন গোয়েন্দারা। তাতে ছিল একটি নরম পানীয়ের ক্যান-সহ ১৫টি বাতিল জিনিস। ওই ক্যানের উপর লেগে থাকা ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রিপোর্ট আসে। তাতে দেখা যায়, সিলভিয়ার বাড়ির কার্পেটে যাঁর শুক্রাণুর নমুনা ছিল, তিনি আসলে এই ডেভিড। মৃত সিলভিয়ার মুখে চাপা দেওয়া তোয়ালে, তাঁর বাড়িতে ছড়িয়ে থাকা আরও অনেক জিনিসেই মিলেছিল সেই নমুনা। তার জেরেই দোষী সাব্যস্ত করা হয় ডেভিডকে। তবে কেন সিলভিয়াকে খুন করেছিলেন তিনি, তা আজও রহস্য। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba