আজঃ রবিবার ২৪-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

হিরো আলম ইস্যুতে প্রকাশ্যে যৌথ বিবৃতি ‘অগ্রহণযোগ্য’

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ২১ জুলাই ২০২৩
  • / পঠিত : ৭৯ বার

হিরো আলম ইস্যুতে প্রকাশ্যে যৌথ বিবৃতি ‘অগ্রহণযোগ্য’

কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্য ভিয়েনা কনভেনশনের বিরোধী। কিন্তু নানা সময় বাংলাদেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা কথা বলছেন। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে কূটনীতিকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি কিংবা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানানো হচ্ছে। তবুও বিদেশিদের থামানো যাচ্ছে না। কূটনীতিকদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চলছেই।

ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৪১-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিরা অন্য দেশে কূটনৈতিক মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তারা সেই দেশের আইন ও নীতির দ্বারা আবদ্ধ হবেন। এছাড়া তারা সে দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। 

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। আমাদের কূটনীতিকরা বিদেশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন না। তারা ভিয়েনা কনভেনশন মেনেই দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা চাইব, বিদেশি কূটনীতিকরাও ভিয়েনা কনভেনশনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দূতাবাস বিবৃতি দিয়েছে। সেই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিদেশি মিশনগুলো তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক এবং টুইটে প্রচার করেছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেলিগেশন।

ওই ঘটনায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের নতুন আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও টুইট করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দূতাবাসের বিবৃতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার (১৯ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমি অ্যাকটিভিস্ট ডিপ্লোম্যাটদের সম্পর্কে বলতে চাই, আমেরিকায় যখন–তখন লোক মেরে ফেলে, তখন কি তারা বিবৃতি দেয়, জাতিসংঘ কি বিবৃতি দিয়েছে? তারা কি বলেছে যে আমেরিকাতে লোক মারা যায় কেন?

ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, কেমব্রিজে ফয়সাল নামের একজন বাংলাদেশি ছেলে মারা গেল। জাতিসংঘ কি বলেছে, ওই ছেলের মৃত্যুর তদন্ত কত দূর এগোল কিংবা রাষ্ট্রদূতরা কি দলবেঁধে কোনো বিবৃতি দিয়েছেন?

সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা কেন তাদের জিজ্ঞাসা করেন না? যখন তাদের দেশে লোক মারা যায়, তখন কেন বিবৃতি দেয় না আর বাংলাদেশ বলেই মগের মুল্লুক পেয়েছে ওরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিক বা মিশনগুলোর কোনো বিবৃতি দেওয়া বা মন্তব্য করা ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘অন্যায়’। কোনো বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের যদি বক্তব্য থাকেও, তা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না। তারা চাইলে কূটনৈতিক চ্যানেলে তাদের বক্তব্য বা পরামর্শ দিতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিক যারা আছেন তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারেন না। কোনো রকমের নির্দেশ, আদেশ বা বিবৃতি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভিয়েনা কনভেনশান অনুযায়ী, কোনো বিদেশি কূটনীতিক আমাদের দেশে বা আমাদের কূটনীতিকরা বিদেশে গিয়ে ওই দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা অগ্রহণযোগ্য ও অন্যায়।

এ দূত বলেন, তারা যে বিবৃতি দিল, এটা সম্পূর্ণ কূটনীতিক আচার বিরুদ্ধ। সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমাদের উচিত তাদের সরকারের কাছে এটার অভিযোগ করা। আমাদের বলা উচিত, এটা অন্যায় এবং তারা যেটা করছেন হয় তারা কূটনীতি সম্পর্কে অজ্ঞাত বা তারা এটা ইচ্ছে করে করছে। আমাদের অবমাননা করছে। তারা আমাদের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারে না। আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করব।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজের ভাষ্য, ভিয়েনা কনভেনশনে যা আছে, তারা আমাদের এখানকার রাজনৈতিক বা যে কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এটা একেবারে স্পষ্ট। প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া একেবারে অনুচিত এবং অবাঞ্ছিত। বিদেশি কূটনীতিকরা যদি পাবলিকলি বিবৃতি দেয়, সেটা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। তাদের যদি কোনো বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকেও সেটা প্রকাশ্যে বলতে পারেন না। তাদের কোনো বক্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তারা নিশ্চই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কূটনৈতিক চ্যানেলে তারা তাদের বক্তব্য বা পরামর্শ দিতে পারেন। আমরা আশা করি, বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।

সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, আমরাই যদি পশ্চিমাদের ইন্ধন যোগাই তাহলে তারা তো বলার সুযোগ পাবেন। যারা এখান থেকে সুবিধা নিতে চায় বা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তারা কারা; এটা বের করা দরকার। গণমাধ্যমকেও এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে হবে।

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba