আজঃ শুক্রবার ২০-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড, মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শনিবার ০৫ Aug ২০২৩
  • / পঠিত : ১৭৫ বার

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড, মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা

ডেস্ক: বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে গরম হয়ে উঠছে পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্র। এতে একদিকে যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান, তেমনি অপর দিকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ুর ক্ষেত্রেও।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সংস্থা ন্যাশনাল ওশনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফোরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) জানিয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীর সমুদ্রগুলোর গড় তাপমাত্রা ২০ দশমিক ৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অন্তত ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি।

বৈশ্বিক জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় সমুদ্রের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগর-উপসাগরগুলো একদিকে বাতাস থেকে তাপ ও কার্বন ডাই অক্সাইডসহ উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে তাপমাত্রার ভারসাম্য রাখে, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেনেরও যোগান দেয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মোট অক্সিজেনের অর্ধেকই আসে সমুদ্র থেকে।

কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাতাস থকে সাগর-মহাসাগর-উপসাগরগুলোর তাপ ও গ্রিনহাউস গ্যাস শোষনের ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে, তাপ বিকিরণে বাধা দেয়— এমন বিভিন্ন গ্যাসের উপস্থিতি বাড়বে বায়ুমণ্ডলে যা ধীরে ধীরে বিশ্বের সার্বিক তাপমাত্রাকে অসহনীয় মাত্রার দিকে নিয়ে যাবে।

কেবল তাই নয়, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পৃথিবীর দুই মেরু ও শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোর হিমবাহ ও জমাট বরফের স্তর দ্রুত গতিতে গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। যদি এমন ঘটে, হালে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়বে এবং পানির নিচে তলিয়ে যাবে পৃথিবীর বহু এলাকা।

এছাড়া অপেক্ষাকৃত গরম সমুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী ও বাস্তুসংস্থানের জন্যও বড় হুমকি। কারণ, সমুদ্রের পানি ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ হলে তা অনেক মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দেখা দেবে, যা সমুদ্রের খাদ্যচক্রের শীর্ষে থাকা তিমি ও হাঙরের জন্য সৃষ্টি করবে খাদ্যসংকট। সংক্ষেপে বলতে গেলে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ‍বৃদ্ধির অর্থ হলো সেখানকার বাস্তুসংস্থান ও খাদ্যচক্র তছনছ হয়ে যাওয়া।

ন্যাশনাল ওশোনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফোরিক অ্যাডমিনিস্টেশনের কর্মকর্তা ও মার্কিন জলবায়ুবিদ ড. ক্যাথরিন লিসেনস্কি বিবিসিকে বলেন, ‘উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সমুদ্রের কথা যদি বাদও দেওয়া যায়….কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাগর-মহাসগারের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বর্তমানে এতটাই বেশি যে, আপনি ঝাঁপ দিলে মনে হবে— আরামদায়ক একটি উষ্ণ বাথটাবের পানিতে আপনি স্নান করছেন ‘

‘কিন্তু মানুষের জন্য আরামদায়ক হলেও সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য এই তাপমাত্রা রীতিমতো বিপর্যয়কর। ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলের অগভীর পানিতে একসময় সুবিশাল প্রবাল প্রাচীর ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে অধিকাংশ প্রবাল ধ্বংস হয়ে গেছে কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধির কারণে।’

যুক্তরাজ্যের সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র প্লেমাউথ মেরিন ল্যাবের কর্মকর্তা ও জলবায়ুবিদ ড. ম্যাট ফ্রস্ট বিবিসিকে বলেন—অতিমাত্রা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করার কারণে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। তিনি আরও জানান, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দূষণ ও অতিরিক্ত মাত্রায় মৎসহ আহরণ সমুদ্রের খাদ্যচক্রকে আরও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে।

‘বর্তমানে আমরা সমুদ্রের ওপর যে পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করেছি, মানব ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই এম পরিস্থিতি দেখা যায়নি,’ বিবিসিকে বলেন ড. ফ্রস্ট।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba