আজঃ মঙ্গলবার ২৪-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

লালমনিরহাটে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে ইউপি সচিবের ঘুষ আদায়

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: মঙ্গলবার ২২ Aug ২০২৩
  • / পঠিত : ১৭৮ বার

লালমনিরহাটে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে ইউপি সচিবের ঘুষ আদায়

: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের সচিব সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।

গত কয়েক মাসে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সাহেদুল। এ ঘটনায় সুবিধাভোগিরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও চেয়ারম্যানের সই জাল করে বরাদ্দ বণ্টন, কার্যবিবরণী বা রেজুলেশন বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচিকে একীভূত করে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মদাতী ইউনিয়নে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭৪ জন মা এ সুবিধা পাচ্ছেন। সেই সুবিধা নিতে ৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপি সচিব তার পছন্দের কয়েকজন ইউপি সদস্যকে ম্যানেজ করে সুফলভোগী মায়েদের কাছ থেকে নিজ সাক্ষর দিয়ে রসিদ মূল্যে ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন। সুফলভোগী কয়েকজন নারী ও তাদের স্বামীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউই জানেন না কী কারণে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ইউপি সচিব সুবিধা দেওয়ার কথা বলে অনেক মানুষের কাছে ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার আগের বছর ও এ বছরের বসতবাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) দেওয়া আছে। কিন্তু এসবের নামে স্ত্রীর কাছে আবার টাকা নেওয়া হয়েছে। আমরা টাকা ফেরত চাই ও ইউপি সচিবের বিচার চাই। 

ভাতাভোগী নাসিমা বেগম ও জান্নাতুন বলেন, সচিব আমাদের কাছে ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। আমরা আগে জানতাম না যে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে সরকার কোনো টাকা নেয় না। আমরা এ টাকা ফেরত চাই।

ওই ইউনিয়নের কৈটারী, মৌজা শাখাতি, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে একাধিক সুফলভোগী নারী ও তাদের স্বামীদের সঙ্গে কথা বলে ৫০০ টাকা করে আদায়ের সত্যতা এবং সুফলভোগী নারীদের স্বামীদের নামে বসতবাড়ির কর আলাদাভাবে আদায় করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে গত ৩০ এপ্রিল সভার কার্যবিবরণী, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের উপস্থিতির সাক্ষর থাকলেও তা অনুমোদন হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয় বাড়ির গৃহকর্তার নামে। এছাড়া আর্থিক অবস্থা ও বাড়িঘর বিবেচনা করে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী পরিবারের সর্বোচ্চ কর ফি ২০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু সুফলভোগী মায়েদের নামে একই হারে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সচিব সাহেদুল ইসলাম টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা বসতবাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাবদ আদায় করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন কারও কাছে টাকা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হলে কয়েকজন ইউপি সদস্যকে হাত করে পরবর্তীতে সচিব কার্যবিবরণী বইয়ে নতুন করে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সংযুক্ত করেন।

তবে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর ভাতাভোগীদের কাছ থেকেই কেবল রেজুলেশন করে কেন কর নিতে হবে এ নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা।

এদিকে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব দায়িত্বভার নেন। কিন্তু রেজুলেশন বইয়ে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৫ জুন রেজুলেশনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কয়েকটি প্রকল্প পাস করান সচিব। সেখানে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সিল ও সই রয়েছে। অথচ তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের ৮টি কাজ ইউপি সচিবের পছন্দের সদস্যরা ভাগাভাগি করে নেন। পরে বিষয়টি টের পেয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন বর্তমান চেয়ারম্যান।

আগের চেয়ারম্যানের আমলের তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় বর্তমান চেয়ারম্যানের সই জালিয়াতির বিষয়ে সচিব সাহেদুল ইসলাম বলেন, এটি অনিচ্ছাকৃত টাইপিং মিস্টেক। পরবর্তীতে সংশোধনী কেন দেওয়া হয়নি তা জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি সাহেদুল।

সার্বিক বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব বলেন, মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগীদের কাছে টাকা নেওয়া ঠিক হয়নি। আমি এ বিষয়ে জানি না, কোনো রেজুলেশন অনুমোদন করিনি। এছাড়া সচিব টাকা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন বলে যে দাবি করছেন তাও সঠিক নয়।

চেয়ারম্যান বলেন, আমি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি কিন্তু কৌশলে ২০২০ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সভায় আমার সই জাল করে দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, আমি বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হবে। এছাড়া লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান ইউএনও।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba