আজঃ বুধবার ২৫-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

স্বামী-স্ত্রী কাঁদছেন আর বলছেন, আগুন আমাদের সব নিয়ে গেলো

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ১৫ Sep ২০২৩
  • / পঠিত : ৮৭ বার

স্বামী-স্ত্রী কাঁদছেন আর বলছেন, আগুন আমাদের সব নিয়ে গেলো

: সকাল সাড়ে ৯টা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের গেটে এক নারী আর পুরুষ অঝোরে কাঁদছেন। নারীটার কান্না থামানোই যাচ্ছে না। সঙ্গে আসা আরেক নারীকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন। নাম শাকিলা আক্তার। বারবার বলছেন, ৭ লাখ টাকা ঋণ শোধ করবো কী করে। আমার বাচ্চাটারে মানুষ করবো কীভাবে। আগুন আমার কপাল পুড়িয়ে দিলো। শাকিলা আক্তারের স্বামী মামুন। দোকানের নাম মামুন বিজনেস সেন্টার।

ওয়ানটাইম প্যাকেজিংয়ের ব্যবসা। মামুন স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। চোখ মুছতে মুছতে বললেন, স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে ধার-দেনা করে দুটো দোকান দাঁড় করাইছিলাম। দুই দোকানে মোট ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। ভোরে আগুন লাগার খবর পাই। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দৌঁড়ে আসি। এসে আগুন ছাড়া আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। সকাল ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। ভেতরে ঢুকতে পারিনি। এক পর্যায়ে জোর করে সাটার ভেংঙে ঢুকি।

কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। ড্রয়ারে দুই লাখ টাকা রাখছিলাম। সকালে বিল দেয়ার জন্য। পুড়ে শেষ। সব পুঁজি ছাই। তিনি আর কথা বলতে পারলেন না। কাঁদতে লাগলেন। 

শওকত এন্টারপ্রাইজের মালিক শওকত হোসেন তার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে কর্মচারী রাসেল ও সাজুকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কাঁদিস না। আল্লাহকে ডাক। 

শওকত এই প্রতিবেদককে আগুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন। ৭০ লাখ টাকার মতো মাল ছিল। বললেন, গতরাতে গোডাউনে মাল এনে রাখছিলাম। গোডাউনও পুড়ে গেছে। যা বাকি ক্রেতাদের দিছিলাম সেগুলোও আর উঠাতে পারবো না। প্রমাণ নেই, হিসাবের কাগজপত্র ছাই হয়ে গেছে। আমার কপালটা পুড়ে গেল। এখন কী করবো। শওকত হোসেন বললেন, এখন আমার দোকান মেরামত করাই দায় হয়ে গেলো। লোন শোধ করবো কীভাবে। নোয়াখালী আমার বাড়ি। ঢাকায় থেকে তিলতিল করে দোকান গড়ে তুলেছিলাম। তার চারটি দোকান এখানে। তার কর্মচারী সাজু বললেন, ১২ লাখ টাকার ঘি আর বাসমতি চাল ছিল। সব এখন আগুনে, পানিতে।

জুতার দোকানি শহিদ। খুচরা জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি করতেন এই মার্কেটে। গ্রামের বাড়ি রংপুরে। বললেন, ভাইরে ছাই ছাড়া আমার দোকানে আর কিছু রইলো না। তিনি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারালেন কাঁদতে কাঁদতে। 

জাবেদ বললেন, রাত ১টায় ঘুমাইছি। পৌনে চারটায় খবর পাই। জহির স্টোরের কর্মচারী জাবেদের চোখেও পানি। বললেন, ঘুম থেকে পড়িমরি করে ছুটে আসি। এসে দেখি দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। ফায়ারসার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পানির যেন আকাল। আমার মালিক কিছুদিন আগে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে এই মুদি দোকান দিয়েছিলেন। তিনিও নি:স্ব হলেন। আমারো পেটে আঘাত পড়লো। এই দোকানে চাকরি করে সংসার চালাতাম।

ব্যবসায়ী মোরশেদ ট্রেডার্সের চাল, ডাল চিনি, দুধ সব পুড়ে গেছে। কর্মচারী ইয়াসিন মোরশেদ আলমের বোনের ছেলে। সে আগুনের দৃশ্য দেখে হতবাক। বললেন মামার দোকান ছিল এটা। মোরশেদ আলম মাথায় হাত দিয়ে একটি মাংসের দোকানের সামনে বসে ছিলেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। একটু পর পর শুধু বলছেন - আমি এখন কী করবো বলেন আপনারা।

এর আগে বুধবার দিনগত রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর একে একে তাদের ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপণ সাহায্যকারী দল। সবশেষ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকায় এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। মার্কেটটি অনেকটা বঙ্গ মার্কেটের মতো। দোকানের সামনেও দোকান ছিল।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba