আজঃ সোমবার ২৫-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

সংসদে বিরোধীদের কঠোর সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ১৫ Sep ২০২৩
  • / পঠিত : ৯৬ বার

সংসদে বিরোধীদের কঠোর সমালোচনার মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

দ্রব্যমূল্য ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল পাসের জন্য তোলা হলে সেটা নিয়ে আলোচনার সময় বিরোধী দলের এমপিরা মন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম এলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাই। দেশের মানুষ জানে ঈদের আগে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আদার দাম কতগুণ বেড়েছিল। এটা বাড়ার কোনো কারণ ছিল না, এসব জিনিস রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে আসে না।

দেশে আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার পরেও দাম অনেকটা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ একটাই এখানে সিন্ডিকেট। তারা এইভাবে এক একটা জিনিসকে টার্গেট করে এবং মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ী মানুষ, তিনি ব্যবসাটা ভালোই বুঝেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বহুবার সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছিলেন। মানুষ যখন বলতে শুরু করেছিল বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটের হোতা তখন সত্য কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি (বাণিজ্যমন্ত্রী) বললেন সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না।

গণফোরামের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কাঁচা মরিচ শুকিয়ে রাখা, ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছেন। এ পরামর্শগুলো আমরা আগে পেলে খুবই উপকৃত হতাম। কারণ চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।

মোকাব্বির খান এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। সেটি আবারও উল্লেখ করে বলেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বলেছিলাম। কিন্তু অন্তিম লগ্নে এসে আর পদত্যাগের দাবি করছি না। আমার মনে হয় মন্ত্রী যোগ্য। যোগ্যতা না থাকলে পাঁচবছর থাকতে পারতেন না। বাংলার মানুষ যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিল, সত্তরের জনপ্রিয় স্লোগান ছিল, সাড়ে সাতকোটি মানুষের স্লোগান-জয় বাংলা, বাংলার জয়। আমার ভয় হচ্ছে আগামীতে মানুষ বলা শুরু করে কী না জয় সিন্ডিকেটের জয়, সিন্ডিকেটের জয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসা ও রাজনীতিতে সফল ব্যক্তি বলে মন্তব্য করেন আরেক সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। সস্তা আমিষ যেগুলো ছিল তার দাম অনেক বেড়ে গেছে। ২০২১ সালে পাঙ্গাসের দাম ছিল ১১১ টাকা এখন সেটা ২০০-২৫০ টাকা। গরিবদের সুরক্ষার সময় এখন কিন্তু সেটার জন্য অর্থ এ মন্ত্রণালয়কে দিতে হবে। এ মন্ত্রণালয় মানুষকে কম টাকায় জিনিস দিতে পারে। বাজারে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে নিতে লাখ লাখ কোটি টাকা মানুষের পকেট থেকে আয় করে চলে যায়। মানুষ কষ্ট পায়।

সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, শুধু দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। মানুষ হইচই করে। আমরা অস্বস্তিতে পড়ি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বললে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চোখের সামনে চলে আসে। বাচ্চা কোলে নিয়ে মহিলারা টিসিবি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। একটু কম দামের জন্য। কিন্তু কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের জন্য দ্রব্যমূল্যের ক্ষতি করছে। বাণিজ্যমন্ত্রীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার দাবি জানান জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। বাণিজ্য সংগঠন বিল না করে বাণিজ্য সিন্ডিকেট আইন করা হলে ভালো হতো বলে টিপন্নি কাটেন তিনি। ঠাকুরগাঁও থেকে নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য বলেন, যখন আলু উঠলো ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয় না, রাস্তায় ওপরে হাজার হাজার বস্তা পড়ে আছে। ওইসব আলু এখন গুদামজাত করে ৪০-৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, সিন্ডিকেট যতক্ষণ পর্যন্ত না ভাঙবেন ততক্ষণ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী বা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দোষ দিয়ে লাভ নেই। সিন্ডিকেট না ভাঙলে দ্রব্যমূল্য কমবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আজকে গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি, ভারতে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি। আমাদের সীমান্ত দিয়ে আগে গরু আসত, এখন গরুর মাংস আসছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর দেখি কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি ১৬০০-১৮০০ টাকা কেজি। কী কারণে?

তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর দোষ দিয়ে লাভ হবে কি? উনি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো বুঝেন। সিন্ডিকেটটা ভালো বুঝেন। সেই জন্য বলছেন সিন্ডিকেটে হাত দিলে পুড়ে যাবেন। তাই বলি সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া কঠিন, এরা শক্তিশালী মানুষ। শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের একটা বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, যে মন্ত্রী যে কাজ করে, সে মন্ত্রণালয় তাকে দেওয়া হয়েছে। সে জন্য বলছি, দ্রব্যমূল্য না কমলে মানুষ বাঁচবে না। কারণ আয় বাড়েনি, যে শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা ছিল এখন ৭০০ টাকা দিলেও তাদের পোষায় না। কারণ বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেন না। তারা ইলিশ মাছ-গরুর মাংস খেতে পারে না। বেগুন খাবে, সেটাও হয় না। তাই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

গত বছরের সঙ্গে বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের তুলনা চিত্র সংসদে তুলে ধরেন পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, একবছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা এখন তা ১৩০-১৩৫ টাকা, ডিমের হালি ছিল ৪০-৪২ টাকা এখন তা ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। গরুর মাংস, বয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী কেন সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না, তা আমরা জানি না।

ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এরা সারা দেশে প্রচার-প্রচারণাও চালিয়েছিল। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিল না। বাণিজ্যমন্ত্রী ও টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রী এটা দেখলেন না।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এখানে জিনিসপত্রের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে আমি নিজে একজন সিন্ডিকেটের লিডার। আমি ব্যবসায়ী। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই সংসদে আমার অনেকবার বলতে হয়েছে যে, আমি ব্যবসায়ী হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাজনীতি করি। আমি রাজনীতি শুরু করার ২০ বছর পরে ব্যবসা শুরু করেছি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা করাটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী। হয়তো ব্যবসা না করলে এদিক সেদিক থেকে চাঁদা নিয়ে আমাকে বাঁচতে হতো। আমি যে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত তা দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আমি বিদেশে রপ্তানি করি।’

বৈশ্বিক কারণে দাম বৃদ্ধি এবং কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে উৎপাদিত দ্রব্য কখনো কখনো বাড়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই কখনো হঠাৎ হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়। ডিমের কথা যদি বলি এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৈরিও করে না, এর সঙ্গে সম্পৃক্তও না। এটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের হাজার হাজার মানুষ মুরগি পালন করে সেই মুরগি ডিম দেয়। পারিবারিকভাবে ছোট আকারে মুরগি পালন হয়। আবার কিছু বড় ব্যবসায়ীও আছে। এই লাখ লাখ ডিম উৎপাদনকারীকে আমরা কন্ট্রোল করবো কীভাবে? মুক্তবাজার অর্থনীতি হচ্ছে বাস্তবতা। আজকে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেটা আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। তবে এটাও ঠিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী সবকিছুর খোঁজখবর নিচ্ছেন। কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথাও বলছেন। আমরা সংসদ সদস্যদেরও এ বিষয়ে সহযোগিতা চাই। আপনারা মানুষের কষ্ট বুঝেন বলেই কথাগুলো বলছেন। তবে বৈশ্বিক ও দেশের সার্বিক অবস্থাটা বিবেচনা করে আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমরা এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। আমরা চেষ্টা করছি। আপনাদের পরামর্শ শুনে যতদূর সম্ভব হয় চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, আমরা ডিমের ব্যাপারে একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি আজকে। যদি সেই দামে না পাই। তাহলে দু-একদিনের মধ্যে ডিম আমদানি করবো। আমরা ভোক্তাদের দিকে লক্ষ্য রাখবো।

মন্ত্রী বলেন, তাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। তিনি সংসদ সদস্যদের পরামর্শও নেবেন। কিন্তু যে চেষ্টা করছেন সেটার স্বীকার করে উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানান।

পরে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন যথাসময়ে করা না গেলে অতিরিক্ত ছয় মাস সময় পাওয়া যায়। বিলে সংশোধনী এনে এখন সেটি আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba