আজঃ রবিবার ২৪-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

পাহাড়ের চূড়ায় হৃদয়কে হত্যা, এরপর শরীর থেকে মাংস আলাদা করে ফেলে’

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: সোমবার ০২ Oct ২০২৩
  • / পঠিত : ২০২ বার

পাহাড়ের চূড়ায় হৃদয়কে হত্যা, এরপর শরীর থেকে মাংস আলাদা করে ফেলে’

ডেস্ক: চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণ ও নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ বহুখণ্ডিত করে গুমের ঘটনায় অন্যতম প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। 

রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. মাহবুব আলম। এর আগে, শনিবার বিকেলে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও কর্ণফুলী থানার নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি এলাকার মংহ্লাজাই মারমার ছেলে উচিংথোয়াই মারমা ও বান্দরবানের রুমা উপজেলার আশ্রমপাড়া এলাকার ক্য থোয়াই অং চৌধুরীর ছেলে ক্যাসাই অং চৌধুরী।

অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. মাহবুব আলম জানান, পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মুরগির খামারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন ভুক্তভোগী শিবলী সাদিক হৃদয়। খামারের কাজ নিয়ে সেখানে কর্মরত সহযোগী কর্মচারী বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হতো তার। বিষয়টি খামারের মালিকরা জানার পর মীমাংসা করে দিলেও হৃদয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেন বন্ধুরা। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট হৃদয়কে ফোন করে রাস্তায় ডেকে নেন তারা। এরপর তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে নেন। ঐ সময় হৃদয় চিৎকার করলে মুখে গামছা বেঁধে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যান।

পরবর্তীতে উমংচিং মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়কে দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষির একপর্যায়ে অপহরণকারীরা দুই লাখ টাকার বিনিময়ে হৃদয়কে ফিরিয়ে দিতে রাজি হন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের বাবা ও নানা বান্দরবানে গিয়ে অপহণকারীদের দুই লাখ টাকা দিলেও হৃদয়কে ফেরত দেননি তারা।

পরে ছেলেকে ফিরে না পেয়ে ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অপহরণ মামলা করেন হৃদয়ের মা। ঐ মামলায় সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা নামে দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় রাউজান থানা পুলিশ। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে অপহরণ, হত্যা, আলামত ধ্বংসের উদ্দেশে লাশ গুম এবং মুক্তিপণ আদায়ের কথা জানান তারা। 

তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে ঝামেলার বিষয়গুলো খামারের মালিকরা মীমাংসা করে দিলেও শায়েস্তা করার উদ্দেশে হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করেন উমংচিং মারমা ও অংথুইমং মারমা। পাহাড়ে হৃদয়কে একদিন আটকে রাখার পর উমংচিং মারমা তার সহযোগীদের বলেন- হৃদয়কে মেরে ফেললে কিছুই হবে না। সে কথা অনুযায়ী হৃদয়কে হত্যার দায়িত্ব নেন উচিংথোয়াই মারমা। তিনি নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হৃদয়ের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ অন্যান্যরা হৃদয়ের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগিতা করেন।

জবাইয়ের পর হৃদয়ের লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেন তারা। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংসের উদ্দেশে লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেন এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে আসেন।

তিনি আরো বলেন, ২৮ আগস্ট হৃদয়কে অপহরণের পর অবরুদ্ধ করে রেখে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হলেও পরদিন ২৯ আগস্ট রাতে তারা হৃদয়কে জবাই করে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যার পর ফিরে এসে বন্ধু উচিংথোয়াই মারমার মোবাইলে সীম ঢুকিয়ে মুক্তিপণের টাকা নেয়ার জন্য হৃদয়ের বাবাকে ফোন দেন উমংচিং মারমা। ছেলেকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশায় ১ সেপ্টেম্বর শ্বশুরকে সঙ্গে নিয়ে বান্দরবানে গিয়ে উচিংথোয়াই মারমাকে দুই লাখ টাকা দেন হৃদয়ের বাবা। সেই টাকা পেয়ে হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সে বাসায় ফিরে যাবে বলে তার বাবাকে জানান উচিংথোয়াই মারমা। স্ব-শরীরে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণ করায় দুই লাখ টাকার মধ্যে নিজেই দেড় লাখ টাকা নেন তিনি। বাকি ৫০ হাজার টাকা বাকিদের ভাগ করে দেন।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার বলেন, মামলাটির পাঁচ আসামি এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যতম প্রধান আসামি উচিংথোয়াই মারমা চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবস্থান করছেন- এমন তথ্য আসে র‍্যাবের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে কর্ণফুলী থানার নতুনব্রিজ এলাকা থেকে তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান- নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন উচিংথোয়াই মারমা। এ সময় হৃদয়ের দুই পা চেপে ধরে জবাইয়ে সহযোগিতা করেন ক্যাসাই অং চৌধুরী।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়- উক্ত অপহরণ পরবর্তী হত্যাকাণ্ডে উমংচিং মামরাসহ তার ৯-১০ জন সহযোগী অংশ নেন। এরমধ্যে র‍্যাবের হাতে দুজনসহ মোট সাতজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুজনের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba