আজঃ মঙ্গলবার ২৬-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

বোতলের বদলে ভোজ্য তেল ড্রামে, উধাও ভিটামিন ‘এ’

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বুধবার ২২ Nov ২০২৩
  • / পঠিত : ১৯১ বার

বোতলের বদলে ভোজ্য তেল ড্রামে, উধাও ভিটামিন ‘এ’

ডেস্ক: সরকার ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন পাস করে ২০১৩ সালে। কিন্তু এই আইনের সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। কারণ বোতলের বদলে দেশে ভোজ্য তেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে সরবরাহ ও বিক্রি করা হয়। এতে ভিটামিন এ নষ্ট হয়ে যায়।

আইনে যা বলা আছে

ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ক আইনে বলা আছে সয়াবিন, পাম অয়েল, পাম অলীন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অন্য যেকোনো উদ্ভিজ্য তেলে নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন এ মেশানো বাধ্যতামূলক। সমৃদ্ধকরণ প্রতীক ব্যতীত এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্য তেল বাজারজাত করা যাবে না।

একই সঙ্গে প্রতি গ্রাম তেলে সর্বনিম্ন ০.০১৫ মিলিগ্রাম থেকে ০.০৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ থাকতে হবে। এই নিয়ম না মানলে কেউ ভোজ্য তেল বিক্রি, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ করতে পারবেন না।

একই সঙ্গে তেলের বোতল, প্যাকেট, টিন বা পাত্রের গায়ে মোড়ক প্রদর্শন করতে হবে।
ভিটামিন এ থাকার প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন এ-এর অভাবে রাতকানা রোগ, চোখের শুষ্কতা ও কর্ণিয়ার ক্ষতি হয়। এতে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ভিটামিন এ স্বল্পতা মানবদেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে দেশের প্রতিটি ঘরে এই পুষ্টি পৌঁছে যাবে।

কোন তেল কত শতাংশ ব্যবহৃত হয়

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’ জানিয়েছে, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ভোজ্য তেলের প্রায় ৭০ শতাংশ পাম তেল, ২০ শতাংশ সয়াবিন এবং ১০ শতাংশ সরিষা, রেসপিড ও অন্যান্য তেল ব্যবহৃত হয়।

বোতল ও ড্রামে বিক্রির হার

প্রজ্ঞা জানিয়েছে, ৬৫ শতাংশ ভোজ্য তেল ড্রামে এবং ৩৫ শতাংশ বোতল বা প্যাকেটের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) দেশের বাজার থেকে ৯১৩টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে বোতলজাত ৫২০টি এবং ড্রামের ৩৯৩টি নমুনা ছিল।


প্রতিষ্ঠানটি তাদের ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে, ড্রামে বাজারজাত করা তেলের ৫২.৬৭ শতাংশের মধ্যে এবং বোতলজাত ৮৭ শতাংশের মধ্যে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে আইসিডিডিআরবির ২০১৭ সালের জরিপে বাজারে খোলা বা ড্রামে সরবরাহ করা ভোজ্য তেলের ৫৯ শতাংশে ভিটামিন এ পাওয়া যায়নি। ৩৩ শতাংশে সরকার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম পাওয়া গেছে। সরকার নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন এ পাওয়া গেছে মাত্র ৭ শতাংশ তেলে।

ভিটামিন এ নিশ্চিতে সরকার যা করছে

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন ভোজ্য তেলের ফর্টিফিকেশন করার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তেল রিফাইনারি কম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়, পরের ছয় মাস বা ২০২২ সালের ১৬ মার্চের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর নন-ফুড গ্রেডেড ড্রামে ভোজ্য তেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ফুডগ্রেড বোতল বা প্লাস্টিক ফয়েল বা পাউচপ্যাকে ভোজ্য তেল বাজারজাত করতে হবে।

এর পর ২০২২ সালের ২ জুন খোলা ড্রামে তেল বিক্রি করার সময় বৃদ্ধি করা হয়। তখন বলা হয়, ২০২২ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে খোলা সয়াবিন এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাম অয়েল খোলা ড্রামে বিক্রি করা যাবে। এরপর বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে আরো ছয় মাসের জন্য সময় বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ফেব্রয়ারি মাস পর্যন্ত ড্রামে ভোজ্য তেল সরবরাহ ও বিক্রি করা যাবে।

সরকারকে কঠোর হতে হবে

পুষ্টি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশনের (গেইন) লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রগ্রাম ও ভ্যালু চেইনের পোর্টফলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ড্রাম থেকে তেল যায় টিনে, সেখান থেকে আরো ছোট পাত্রে। এতে আলো, বাতাসের সংস্পর্সে এসে ভিটামিন এ নষ্ট হয়ে যায়। বড় কম্পানিগুলোর প্রতিটিরই ড্রাম বাদ দিয়ে বোতলজাত করার সক্ষমতা রয়েছে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba