আজঃ শুক্রবার ২০-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: সোমবার ২৭ Nov ২০২৩
  • / পঠিত : ১৮৬ বার

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই

ডেস্ক: গাজায় ইসরাইল যা করছে তা দেশটির জন্য আত্মঘাতী হতে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশটিকে তার অপরাধমূলক নীতিগুলোর দাম চুকাতে হবে। এমনকি এ কারণে শক্তিশালী ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ গঠনের যে স্বপ্ন ইসরাইল দেখেছিল, তারও পতন ঘটতে পারে। আল-জাজিরার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা তার সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এ ভবিষ্যতবাণী করেছেন। 

গণমাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয় তার ওই বিশ্লেষণটি। এতে তিনি বলেন, আত্মরক্ষার নামে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই সুচিন্তিত এবং বিস্তৃত গণহত্যা কোনো দিক থেকেই তাদের নিরাপত্তা দেবে না এবং তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যতও নিশ্চিত করবে না। বরঞ্চ, ইসরাইলের এই বর্বরতার কারণে এ অঞ্চলে আরও বড় অস্থিরতার জন্ম হবে। এরফলে ইসরাইল রাষ্ট্র আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ঐতিহাসিকভাবে প্রতিকূল এই অঞ্চলে দেশটির টিকে থাকার স্বপ্নও হুমকিতে পড়বে।

মারওয়ান বিশারা বলেন, তিনি যদিও এই যুদ্ধের আগেও ইসরাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। ১৯৯০ সালের পর কিছু সময়ের জন্য ইসরাইল কিছুটা স্বাভাবিক পথে হেঁটেছিল। সে সময় জাতিসংঘের মাধ্যমে আরব দেশগুলো ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ইসরাইলের ঔপনিবেশিক আচরণের কারণে সেটিও দীর্ঘায়িত হয়নি।

এটি তার দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো এবং প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাস করার অসংখ্য সুযোগ নষ্ট করেছে। এ নিয়ে ইসরাইলি কূটনীতিক আবা এবান একবার মজা করে বলেছিলেন যে, ‘সুযোগ হারানোর’ সুযোগ পেলেই তা কাজে লাগিয়েছে ইসরাইল। 

এরপর দখলদারিত্বের অবসানের পরিবর্তে ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে তার উপনিবেশ স্থাপন প্রকল্পের গতি দ্বিগুণ করে। গত কয়েক দশকে দখল করা ফিলিস্তিনি ভূমিতে অবৈধ ইহুদি বসতি এবং বসতি স্থাপনকারীদের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। বিশেষ বাইপাস সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে একটি দ্বৈত ব্যবস্থা তৈরি করেছে ইসরাইল, যেখানে ইহুদিদের জন্য উচ্চতর এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য নিকৃষ্ট পদ্ধতি চালু রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনে তা শেকড় বিস্তার করেছে। 

আল-জাজিরার এই বিশ্লেষক বলেন, দীর্ঘ দিন শান্তি অনুপস্থিত থাকায় পরবর্তী দুই দশকে ইসরাইল আরও ফ্যাসিবাদের দিকে পিছলে যায়। ইহুদিদের আধিপত্য নিশ্চিতে আইন পরিবর্তন করা হয়। জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূমি দখলে নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে তেল-আবিব। এই শতাব্দীতে এসে কট্টোর ধার্মিক এবং অতি-ডানপন্থী দলগুলো জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এতে ইসরাইলের ক্ষমতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হাতে এসে পড়ে। যার ফলে ইসরাইল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরব ও ইহুদী দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহাবস্থানের ভিত্তিতে শান্তির সমস্ত সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যায়।

ক্ষমতায় আসার পর নেতানিয়াহুর সরকার কোনো ধরণের উদারনীতি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং আরও দ্রুততার সঙ্গে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ভূমি দখল শুরু করে। পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদী বসতি স্থাপনের গতি বৃদ্ধি পায়। গাজায় দখল চালাতে না পারলেও অঞ্চলটির উপরে অবরোধ জোরদার করে ইসরাইল। ফলে গাজা বিশ্বের সবথেকে বড় মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়। 

আর এমন প্রেক্ষাপটেই গত ৭ই অক্টোবর হামাসের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ইসরাইলের তখনই বুঝা উচিৎ ছিল যে, তারা চাইলেই ২০ লাখ মানুষকে এভাবে বন্দী করে রাখতে পারবে না। তাদের তখন এই সংকটের গোড়া থেকে সমাধানের চেষ্টা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা না করে নেতানিয়াহু সরকার তার আসল চেহারা উন্মোচন করে। তিনি উল্টো গাজায় একটি গণহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই যুদ্ধ কোনো দিক থেকেই শুধু হামাসের বিরুদ্ধে নয়, এটা সকল গাজাবাসীর জন্য। একাধিক ইসরাইলি নেতা রাখঢাক না রেখেই ঘোষণা করেছেন যে, গাজায় কেউ নিরপরাধ নয়। 

গত দেড় মাস ধরে ইসরাইল গাজায় আন্তর্জাতিক আইনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ধ্বংস ও সম্প্রসারণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের আক্রমণে গাজার হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ এবং আবাসিক ভবনগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। এরমধ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে না দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলকে অর্থ, অস্ত্র এবং কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে সুরক্ষিত রেখেছে পশ্চিমারা। আর সেই আশ্রয়ে ইসরাইল হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, শিশু থেকে বয়স্ক, ডাক্তার, শিক্ষক, সাংবাদিক, পুরুষ থেকে নারী সবাইকে হত্যা করে চলেছে।

কিন্তু এই বিদেশ থেকে আসা জাতির মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার আর কোনো সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনিরা এখন এই অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। ইসরাইল তার হিংসাত্মক বর্ণবাদী আচরণকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য তার কল্পিত ধর্মতাত্ত্বিক দাবিগুলিকে আর ব্যবহার করতে পারে না। ঈশ্বর কখনই নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করাকে অনুমোদন করতে পারে না। ইসরাইলের মার্কিন ও পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকদেরও উচিত নয়।

দিন যত যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর জনমত ইসরাইলের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। জনগণের চাপে তাদের নেতারাও একসময় বাধ্য হবে ইসরাইলের বিষয়ে তাদের নীতি বদলাতে। এরইমধ্যে গাজায় শিশু হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স। এটাই ইঙ্গিত দেয় যে ইসরাইলের বাড়াবাড়ি তার জন্যেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

ইসরাইলের টিকে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ করা। এর থেকে ভালো বিকল্প দেশটির কাছে নেই। এখনই ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধ করার এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান মেনে নিতে বাধ্য করা উচিৎ পশ্চিমা দেশগুলোর। নেতানিয়াহু ও তার কট্টোরপন্থী জোট ধরে নিয়েছে যাই হোক না কেন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে আছে। 

গাজা যুদ্ধের অনেক আগেই নেতৃস্থানীয় ইসরাইলি সাংবাদিক আরি শাভিত বলেছিলেন, ইসরাইল যদি এই পথেই চলতে থাকে তাহলে তার ধ্বংস অনিবার্য। গত সপ্তাহে ইসরাইলের শিন বেট সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক প্রধান অমি আয়লোন সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সরকার যদি এভাবেই যুদ্ধ এবং আঞ্চলিক সম্প্রসারণ চালিয়ে যায় তাহলে তা ইসরাইলের পুরোপুরি ধ্বংস ডেকে আনবে। প্রাচীন ক্রুসেডার থেকে শুরু করে আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তি পর্যন্ত সমস্ত নৃশংস অনুপ্রবেশকারীরা ফিলিস্তিনে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইলের ক্ষেত্রেও তা হতে চলেছে। আর গাজার এই যুদ্ধ হচ্ছে ইসরাইলের শেষের শুরু।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba