আজঃ মঙ্গলবার ২৪-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

বাংলাদেশের নির্বাচনী মরশুম ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করেছে

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: রবিবার ০৩ Dec ২০২৩
  • / পঠিত : ১১৯ বার

বাংলাদেশের নির্বাচনী মরশুম ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করেছে

ডেস্ক: বাংলাদেশে একটি নির্বাচনী মরশুম ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ এবং কূটনৈতিক পন্থা তুলে ধরছে।পাশাপাশি কৌশলগত অংশীদার এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কও আলোচনায় উঠে আসছে। বাংলাদেশে ৭ই জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লি উভয়ই বলে যে, তারা একটি গণতান্ত্রিক এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশকে সমর্থন করে। কিন্তু প্রধান দুই দল একে অপরকে শক্তি দেখানোর জন্য একেবারেই ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। একদিকে বাংলাদেশের বিরোধী দলের ভোট বয়কট রাজপথে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে শাসক দলেরনির্বাচনী কারচুপি অতীতের সব অভিযোগকে ছাপিয়ে গেছে। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ দল টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকতে চাইছে, যা তাকে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা করে তুলতে পারে। তবে তার সমালোচকরা যুক্তি দেন, তার ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ আংশিকভাবে নির্বাচনী কারচুপির কারণে হয়েছে, যে অভিযোগটি তিনি অস্বীকার করে এসেছেন । যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা একটি প্রশ্নবিদ্ধ ভোট সহ্য করবে না। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য ‘দায়িত্বশীল বা জড়িত’ হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধা চাপিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে, নির্বাচনী পরিকল্পনা এগিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিরোধী নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা এ মাসের শুরুর দিকে মিডিয়াকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অংশীদার হিসাবে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং প্রগতিশীল দেশটির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব।’ যেখানে ভারত নিজেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে দাবি করে এবং সেখানে সে গণতান্ত্রিক প্রতিবেশীদেরইপছন্দ করবে।

নয়াদিল্লি ভারত-বিরোধী মনোভাবের সাথে পরিপূর্ণ প্রতিবেশী দেশটিতে হাসিনাকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে দেখে। উদাহরণস্বরূপ, মালদ্বীপ সম্প্রতি এমন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে যিনি স্পষ্টতই ভারত-বিরোধী প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে লড়েন।

বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে ভারতেরও বিরোধের ইতিহাস রয়েছে। বিএনপি বর্তমানে জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছে। কারণ শেখ হাসিনা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথ তৈরির জন্য পদত্যাগ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। অতীতে বিএনপির বিরুদ্ধে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা)-এর মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহিত করার অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং অনুরূপ দলগুলিকে বাংলাদেশে থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। বাণিজ্য, জ্বালানি, কানেক্টিভিটি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা এড়িয়ে গেছে বিএনপি। শেখ হাসিনা সেই প্রবণতাকে উল্টে দেন এবং ভারতের সাথে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলেন, যার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার একটি সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনা সাধারণ বিষয়। যার মধ্যে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে অগ্নিসংযোগ এবং সংঘর্ষের অনেকগুলি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি বলেছেন -‘সব দলেরই প্রতিবাদ করার অধিকার আছে, কিন্তু তা শান্তিপূর্ণ হওয়া উচিত।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ‘বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল, পরবর্তীতে এটিকে অ-অংশগ্রহণমূলক ও অগণতান্ত্রিক বলে সমালোচনা করার জন্য। এটি সত্য না।’ কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক ওয়াশিংটনের কঠোর অবস্থানে বিস্মিত হয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে আমেরিকানরা নিশ্চিতভাবেই ভারতের প্রতি শেখ হাসিনার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ককে জটিল করে তুলছে। বাংলাদেশের সাথে আমাদের সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সাফল্য শেখ হাসিনার অধীনে এবং তিনি আমেরিকার ‘গুড বুকে’ নেই।”

দিল্লির এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো সি. রাজামোহন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ সম্পর্কে মার্কিন নেতাদের অবগত করার জন্য বিএনপি বাংলাদেশি প্রবাসীদের কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু হাসিনা মার্কিন নীতি নির্ধারকদের সাথে একমত নন এবং একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

এখানে চীনা ফ্যাক্টরটি ওয়াশিংটনের দৃঢ় পদক্ষেপের পাশাপাশি ভারতের বিস্ময়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে। এই অঞ্চলের বড় শক্তি ভারত, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন ভারতের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। চীন বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীর পাশাপাশি একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে চীন।

চীন এবং হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক - যার অবস্থান বঙ্গোপসাগরে এটিকে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তোলে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা কিছু প্রচেষ্টা করেছেন। তিনি ভারতে গ্রুপ অফ ২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেনের সাথে হাসিমুখে একটি সেলফি তুলেছিলেন এবং সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রেসিডেন্টের সাথে একটি সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আমেরিকান নীতিনির্ধারকরা তার চীনপন্থী মনোভাব সম্পর্কে অবগত। 

ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে ঢাকা ও শেখ হাসিনাকে কাছে টেনে নেয়ার আরও কারণ রয়েছে । নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন যে বিএনপির হাতে ক্ষমতা স্থানান্তর ভারতের প্রভাবকে দুর্বল করে দেবে এবং চীনের জন্য তার স্বার্থ সম্প্রসারণ ও সুসংহত করার দরজা খুলে দেবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ আশা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সম্পর্ক শেখ হাসিনা সরকারের উপর ওয়াশিংটনের চাপ কমাতে সাহায্য করবে। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের উষ্ণ সম্পর্ক অন্যান্য ইস্যুতেও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ২+২ বৈঠকে বাংলাদেশের বিষয়ে মতামত বিনিময় করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্টভাবে শেয়ার করেছি। ... তৃতীয় দেশের নীতি নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না ।’

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তার মনোভাব নরম করার কোনও লক্ষণ নেই। রোববার প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১০,০০০ বিরোধী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র এশিয়া গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, ‘সরকার কূটনৈতিক অংশীদারদের সাথে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার দাবি করছে। যদিও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ একই সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে ভরছে ।’ বাংলাদেশের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে এবং আগামীদিনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই অনুসরণ করবে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সিবাল উদ্বিগ্ন যে, বিএনপি যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে তা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে তিনি আশাবাদী যে ঢাকার দায়িত্বে যে-ই থাকুক না কেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রোফাইল এবং অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারকে বাস্তববাদী হতে এবং নয়াদিল্লির সাথে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করবে। -নিক্কেই এশিয়ার নিবন্ধ

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba