মাহিকে চলচ্চিত্রে ফিরে যেতে বললেন আওয়ামী লীগ নেতা

: মাহিয়া মাহিকে চলচ্চিত্র জগতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার।

মাহিকে ‘অতিথি পাখি’ আখ্যা দিয়ে ডাবলু সরকার বলেন, বাবা, তুমি তোমার চলচ্চিত্র জগতে চলে যাও। তুমি ওখানে অভিনয় করো। অভিনয় করে তুমি খ্যাতি অর্জন করো, পুরস্কার পাও।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নে নৌকার নির্বাচনী পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বক্তব্যে মাহির মেকআপ প্রসঙ্গ তুলে তাকে কটাক্ষও করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা । তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক ছড়িয়ে পড়েছে যোগাযোগমাধ্যমে।

ডাবলু সরকার আরও বলেন, আর বাবা, তুমি যদি নির্বাচন করতেই চাও, তুমি সাধারণ মানুষের কাছে যাও। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি হও। সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যাও, সহযোগিতা করো। রাজনীতি খালি শুধু নির্বাচনের সময়ে আসবা, আর তুমি বেফাঁস কথা বলবা, সেটি কি রাজনীতি? এই মানুষ কি আপনাদের সেবা দিতে পারবে? পারবে না।

ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতি আমরা করি। বুঝি এর মর্মব্যথা কত। রাত্রি তিনটার সময় ফোন আসে, ডাবলু ভাই আমরা হসপিটালে। এই শীতের মধ্যে একটা গেঞ্জি বা একটা চাদর গায়ে দিয়ে ছুটে চলে যাই একটা মোটরসাইকেল বা রিকশাতে করে। গিয়ে ওই লোকটার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করে, ওটিতে ঢুকিয়ে, ওষুধপত্র কিনে ব্যবস্থা করে দিয়ে ভোরবেলায় বাড়িতে যাই। এত সস্তা রাজনীতি না।

তিনি আরও বলেন, কোন ব্যক্তিটা মারা গেল, তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। রাজনীতিতে আপনি আসলেন, সুন্দর চেহারা দেখাবেন, আর মনে হচ্ছে তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষ আপনাকে উপচে পড়ে ভোট দিবে! এ সময় নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিত ছিলেন।

ডাবলু সরকার বলেন, আপনাদের এলাকার কৃতী সন্তান, যিনি আপনাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যিনি আপনাদের পথ দেখাচ্ছেন, সেই ওমর ফারুক চৌধুরীকে নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ফেসবুক বা ইউটিউবে এসে ওই মহিলা বেফাঁস কথা বলছেন। আমার মনে হয়, আপনারা এখানে যারা এসেছেন। কেউই বিউটি পারলার থেকে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার টাকা খরচ করে এই জনসভায় আসেননি। আর ওই ভদ্রমহিলা ইউটিউব বা ফেসবুকে আসার টাইমে দেখবেন, তার চেহারায় কত হাজার টাকার মেকআপ আছে। যার নাম নাকি মাহিয়া মাহি।

অপরদিকে মাহি তার নির্বাচনী প্রচারে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তানোরে একটি পথসভায় বলেন, চৌধুরী সাহেবের (ওমর ফারুক চৌধুরী) হয়তো অনেক টাকা আছে। কিন্তু তার মন নেই, দিল নেই। সে মানুষকে ভালোবাসতে জানে না। সে আপনাদের সঙ্গে টংদোকানে বসে চা খাইতে পারে না। কারণ, তার তো অনেক টাকা। সে এসি রুমে বসে থাকবে। আর খালি মানুষকে শাসন করবে। ভয় দেখাবে, শোষণ করবে।

মাহি আরও বলেন, আমি এখানে এসেছি কেন। কারণ হচ্ছে, আমি এই জমিদারি প্রথার অবসান চাই। এই স্বাধীন বাংলাদেশে জমিদারি প্রথার কোনো ভাত নেই। এই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন থাকতে চায়। নিজের খেয়ে, নিজের পরে, নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। কাউকে ভয় পেয়ে বাঁচতে চায় না। আমি এর প্রতিবাদেই নির্বাচন করছি।

এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে ডাবলু সরকার ও মাহিয়া মাহি কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। কিন্তু দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা)। তার প্রতীক ট্রাক। আর নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি টানা ৩ বার ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন।

রাজশাহী-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১০ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও স্বতন্ত্র মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার নিপা) এছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র মো. গোলাম রাব্বানী (কাঁচি প্রতীক) এবং স্বতন্ত্র মো. আখতারুজ্জামান (ঈগল প্রতীক)জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন (লাঙ্গল প্রতীক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নুরুন্নেসা (আম প্রতীক), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান (সোনালী আঁশ প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) আল সামাদ (টেলিভিশন প্রতীক), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর প্রতীক)।