আজঃ সোমবার ১১-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

মাহমুদ ফয়সালের প্লট-ফ্ল্যাট জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ২৮ জুন ২০২৪
  • / পঠিত : ৬৩ বার

মাহমুদ ফয়সালের প্লট-ফ্ল্যাট জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ

ডেইলি এসবি নিউজ ডেস্ক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউরের বিপুল সম্পদের আলোচনা চলার মধ্যেই সামনে এসেছে আরেক কর্মকর্তার বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য। রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল তার ও স্ত্রী-স্বজনদের নামে থাকা প্লট, ফ্ল্যাট, দোকান ক্রোক ও ৮৭টি ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র, এফডিআর জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল। দুদক সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব বোর্ডের সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল টাকার বিনিময়ে ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

এ ছাড়া করদাতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুষ আদায় করেন। চলতি বছর এসব অভিযোগ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জমা পড়ে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে সংস্থাটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানকালে দুদক ইতিমধ্যে ১৬ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় ফয়সাল নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ এনে আত্মীয় ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন।

পরে এসব অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সর্বশেষ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী ও শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নামে ৮৭-এর অধিক হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে ২০০৫ সালের ২রা জুলাই চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কর) হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি চাকরিতে যোগদান থেকে এ পর্যন্ত চাকরিরত অবস্থায় ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর ও রূপান্তর করে নিজ নামে ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০২ টাকা মূল্যের অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট ক্রয় করেছেন। এ প্লটের ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুদা হাসানের ওয়ান ব্যাংক হিসাব থেকে। 

ফয়সাল ও তার স্ত্রী’র স্থাবর সম্পদ: দুদক কর্মকর্তারা জানান, কর সচিব ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ঢাকার ভাটারা থানার বড় কাঠালদিয়া মৌজায় ১০৫০০ নং দলিলে ৫ কাঠা জমি কেনেন। যার দলিল মূল্য ১৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্য ৭৫ লাখ টাকা। একই মৌজায় ৯২৩১ নং দলিলে আফসানা জেসমিনের নামে ২.৫ কাঠা জমি রয়েছে। যার মূল্য ১৭ লাখ ০৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কামতা মৌজায় ৯৮২১ নং দলিলে ১০০.১৭ বর্গমিটার দোকান রয়েছে। যার মূল্য ৭ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। অবশ্য সবমিলিয়ে এসব জমির বর্তমান মূল্য কোটি টাকার বেশি বলে জানান দুদক কর্মকর্তারা। 

অন্যদিকে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজ নামে ভাটারা থানার বড় কাঁঠালদিয়ায় ৯২৩১ দলিলে ২.৫ কাঠা জমি কেনেন। এই জমির দামও ১৭ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কামতায় ৩৭৫২ ও ৩৭৫৩ দলিলে ০.০৯৯০ একর জমি কেনেন ২ লাখ টাকা দিয়ে। একই থানার গুতিয়াব মৌজায় ১১৬৫৭নং দলিলে ০.০৩ একর জমি রয়েছে যার দলিল মূল্য ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর হারারবাড়ি মৌজায় ৬৬৯৫নং দলিলে ৩৩৪.৪৫ বর্গমিটার আয়তনের দোকান কেনেন ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকায়। এসব ছাড়াও ঢাকার খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া মৌজায় ৮৯৭১নং দলিলে ০.৪৫ শতাংশ জমি রয়েছে ফয়সালের নামে। যার মূল্য দুই লাখ টাকা।

শুধু নিজ ও স্ত্রীর নামেই সম্পদ গড়ে ক্ষান্ত হননি কর সচিব ফয়সাল। তার স্বজন আহম্মেদ আলীর নামে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী রোডে ৩ হাজার বর্গফুটের কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া মমতাজ বেগম নামে আরেক স্বজনের নামে মেরাদিয়ায় ১০ কাঠা জমি রয়েছে যার বাজার মূল্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা। যদিও দলিলে এই জমির দাম ৫২ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। 

ফয়সাল ও তার স্বজনদের নামে যত ব্যাংক হিসাব: অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দু’টি সঞ্চয়পত্র, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ৪টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, স্বজন আফতাব আলীর নামে দু’টি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দু’টি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে ৩টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সালের ব্যাংক হিসাব ছাড়াও যাদের হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে তারা হলেন, শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের জন্য ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দের আবেদন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা মোস্তাফিজ। পরে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তার স্বজনদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এসব সম্পদ তারা অন্যত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান বা মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে হস্তান্তর হলে রাষ্ট্রের ক্ষতির কারণ রয়েছে। 

এতে আরও বলা হয়, অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানিলন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিগণের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের নিমিত্ত ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba