আজঃ বৃহস্পতিবার ২১-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

নিজ্জার হত্যাকাণ্ড : রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের হিড়িক ভারত-কানাডার

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: মঙ্গলবার ১৫ Oct ২০২৪
  • / পঠিত : ২৩ বার

নিজ্জার হত্যাকাণ্ড : রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের হিড়িক ভারত-কানাডার

ডেইলিএসবিনিউজ ডেস্ক : কানাডাপ্রবাসী শিখ নেতা ও দেশটির নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কানাডা এবং ভারতের মধ্যে। সোম ও মঙ্গলবার কানাডা তার ভারতীয় দূতাবাস থেকে ৬ জন ভারত তার কানাডীয় দূতাবাস থেকে ৬ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।


বহিষ্কৃতদের সবাই দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিক। দুই দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারও রয়েছেন এ তালিকায়। টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন এবং তারপর কিছুদিন স্থিতাবস্থা চলার পর অনেকটা আকস্মিকভাবেই এ পদক্ষেপ নিলো ২ দেশের সরকার।

সোমবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়ে জলি এক বিবৃতিতে এ ইস্যুতে বলেন, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য ভারতের কাছে একাধিকবার সহযোগিতা চেয়েছে কানাডার সরকার, কিন্তু ভারত মৌখিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা ঘটেনি।


তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং দূতাবাস বা হাইকমিশনের শীর্ষ কূটনীতিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কূটনীতিকদের দায়মুক্তি সংক্রান্ত বৈশ্বিক আইন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিশেষ ইস্যুতে আইনটি শিথিল করার অনুরোধ করেছিল অটোয়া, কিন্তু সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।

“কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমরা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতে যেতে চাই না, কিন্তু অন্য কোনো দেশের এজেন্ট এসে কানাডীয়দের হত্যা করবে এবং তা নিশ্চিতভাবে জানার পরও আমরা চুপচাপ বসে থাকব— এটা হতে পারে না”, বিবৃতিতে বলেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


এদিকে অটোয়া এ পদক্ষেপ নেওয়ার এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনারসহ ৬ শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারাদেশ দেয় ভারত। মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, “একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছে কানাডার সরকার। ভারতের হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকদের যেভাবে দেশটির সরকার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে, তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।”

“তাছাড়া কানাডা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকদের প্রত্যাহারের ব্যাপারটি আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল। কারণ বর্তমানে দেশটিতে যে পরিস্থিতি, তাতে কানাডার সরকার আমাদের কূটনীতিকদের প্রতিশ্রুত নিরাপত্তা দেবে কি না, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশয় ছিল।”

ভারতীয় নাগরিক নিজ্জার ১৯৯৭ সালে অভিবাসী হিসেবে কানাডায় পাড়ি জমান। পরে ২০১৫ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান তিনি। ভারতের বহুল আলোচিত পৃথক স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলন করে আসা খালিস্তানপন্থীদের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যানকুভারে একটি শিখ মন্দিরের পাশের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন নিজ্জার। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে কানাডায় ইতোমধ্যে চার ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলে তদন্তের পর দাবি করেছে কানাডার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ নিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ভারত সোমবার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগকে ‘‘অযৌক্তিক’’ এবং ‘‘রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য ভারতকে কলঙ্কিত করার কৌশল’’ বলে অভিহিত করেছে। গত বছর নিজ্জার হত্যা ঘিরে কানাডীয় নাগরিকদের ভিসা প্রদান সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এমনকি দিল্লিতে নিযুক্ত কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিতে অটোয়াকে বাধ্য করে দিল্লি।

সোমবার আরও কঠিন পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে চালানো চরমপন্থা, সহিংসতা এবং ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আন্দোলনে ট্রুডো সরকারের সমর্থনের প্রতিক্রিয়ায় আরও পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে দিল্লি।’’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লিতে কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকেও তলব করেছে। পরে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, অটোয়া তার দাবির পক্ষে ভারতকে প্রমাণ দিয়েছে।

‘‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সাথে ভারত সরকারের এজেন্টের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দিল্লিকে বিশ্বাসযোগ্য, অকাট্য প্রমাণ দিয়েছে অটোয়া, ’’বলেন কানাডীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টুয়ার্ট হুইলার।

সূত্র : রয়টার্স, আরটি


ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba