আজঃ বৃহস্পতিবার ১৯-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

রাসিকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম কাউন্সিলর সাগরিকা

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: শুক্রবার ২৩ জুন ২০২৩
  • / পঠিত : ১৬৭ বার

রাসিকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম কাউন্সিলর সাগরিকা

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (রাসিক) প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ সাগরিকা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।  তিনি নগরীর সংরক্ষিত ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত রাসিক নির্বাচনে আনারস প্রতীকে তিনি ৬ হাজার ২৬৩ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাজমা বেগম পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০০ ভোট। 

সুলতানা আহমেদ সাগরিকা বলেন, ভোটাররা আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে চিনি, পাশে আছি, চিন্তা করো না। সেই কথা রেখেছেন ভোটাররা। প্রথম নির্বাচনেই ভোটারদের এমন ভালোবাসা পাবো তা ভাবিনি।

তিনি আরও বলেন, জনগণের ভালোবাসার এই ঋণ জনকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে শোধ করতে চাই। ভোটে জেতার পর শুধু আনন্দের অশ্রু আসছে। যারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি তাদের সেবা করার জন্য সব সময় পাশে থাকবো।

সুলতানা আহমেদ সাগরিকা বলেন, আমি যেসব বাধার সম্মুখীন হয়েছি, টিপ্পনী ও অবহেলার শিকার হয়েছি। এসবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করব। একই সঙ্গে সমাজকে সচেতন করার কাজ করব। আমরাও যে মানুষ, একই কাতারে চলতে পারি সে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করব। এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এটি সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, মানুষ সচেতন হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আমার মতো অবহেলার স্বীকার যেন আর কেউ না হয়। এজন্য আমি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করি।

২০০০ সালে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামে সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদপ্তর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। সুলতানা আহমেদ সাগরিকা হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সাগরিকার বাড়ি নগরীর শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়ায়। তবে তিনি থাকেন শিরোইল কলোনিতে। মা-বাবার চার সন্তানের একজন তিনি। বাবা নেই। বর্তমানে মা-বোন একসঙ্গে থাকেন। মাঝে-মধ্যে তিনি বাড়িতে যান। তবে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব সাগরিকার কাঁধেই।

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই অষ্টম শ্রেণি পাসের পরে থেমে যায় শিক্ষাজীবন। তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় থেমে যাওয়া শিক্ষাজীবন আর চালানো সম্ভব হয়নি। সাগরিকার বিভিন্ন প্রতিবন্ধতার বোঝা সমাজ পেরিয়ে পরিবার অবধি পৌঁছায়। এতে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মধ্যে কেটেছে তার জীবন। তবে এখন সব বাধা পেরিয়ে জনগণের সেবক হতে চান সাগরিকা। 

সাগরিকা বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড। আমি শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। কারণ মানুষ ব্যতিক্রম কিছু চেয়েছিল। এই ওয়ার্ডে আমি ছাড়াও ৫ জন প্রার্থী ছিলেন। সবার মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা বেশি। আমি আনারস প্রতীক পেয়েছিলাম। আমার কোথাও কোনো পিছুটান নেই। ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেছে। আমি আমার জনগোষ্ঠী ছাড়াও ওয়ার্ডের বাসিন্দারের অধিকার আদায়ে কাজ করবো।

এ বিষয়ে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, সাগরিকা তিনটি ওয়ার্ডের সবার প্রার্থী। তার জন্য সবাই কাজ করেছেন। প্রথম থেকেই বেশির ভাগ মানুষই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছিলেন। ভোটের মাধ্যমে ভালোবাসা দেখিয়েছেন। এতে আমরাও খুশি। আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমাদের অধিকার আদায়ের পথকে আরও মসৃণ করবে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba