আজঃ শনিবার ২৩-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বেতন-ভাতা বন্ধ, প্রভাষক বরখাস্ত

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বৃহস্পতিবার ০৩ Aug ২০২৩
  • / পঠিত : ১১৪ বার

যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের বেতন-ভাতা বন্ধ, প্রভাষক বরখাস্ত

যশোর আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেন এবং উপাধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলামের সরকারি বেতন-ভাতা (এমপিও) বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত জুন মাসের বেতন তুলতে পারেননি তারা। এ ছাড়াও কলেজের স্মাতক পর্যায়ের রসায়ন বিষয়ের প্রভাষক (নন এমপিও) মুসফিকুর রহমান শেখের নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

যার প্রেক্ষিতে মুসফিকুর রহমান শেখকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আব্দুল কায়েস নামে এক ব্যক্তি গত বছরের ১৮ মার্চ আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের নানা অনিয়ম তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর জেলা কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি তাঁর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকাল পত্রিকায়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল সরকারি ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে। কলেজটি ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত না হলেও এটি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং এখানে স্মাতক পাশ কোর্সের পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেন তখন মূলত কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের প্রভাষক এবং অবৈধভাবে নিয়োগ নিয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে আবেদনের যোগ্যতা প্রভাষক পদে (এমপিওভুক্ত) ১৫ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু আবেদন করার সময় জেএম ইকবাল হোসেনের তখন এমপিওভুক্ত হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল না বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ওই নিয়োগ বোর্ডে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ড মশিউর রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রতিনিধি যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ইবাদুল হককে ম্যানেজ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জেএম ইকবাল হোসেন অধ্যক্ষ হিসেবে এমপিওভুক্ত হন এবং এ পর্যন্ত সরকারি ৮২ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৮ টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন। একই সময়ে কলেজ থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪২২ টাকা উত্তোলন করেছেন। উপাধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মঞ্জুরুল ইসলাম কলেজের ইংরেজির প্রভাষক থাকা অবস্থায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। উপাধ্যক্ষ হিসেবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তিনি সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু স্বাক্ষর করেন উপাধ্যক্ষের জায়গায় এবং কলেজ প্রদত্ত সকল সুযোগ সুবিধা উপাধ্যক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। কলেজের স্মাতক পর্যায়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক (নন এমপিও) মুসফিকুর রহমান শেখের নিবন্ধন সনদ নেই। অবৈধপন্থায় তিনি নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকতা করেছেন বলেও অভিযোগ। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর জেলা কার্যালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি দেয়।

মাউশি বিষয়গুলি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেন এবং উপাধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলামের সরকারি বেতন-ভাতা (এমপিও) বন্ধ করে দেয়। গত জুন মাসের এমপিও শীটে তাদের বেতন শুন্য দেখানো হয়েছে। আর কলেজের স্মাতক পর্যায়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক (নন এমপিও) মুসফিকুর রহমান শেখকে কলেজ থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কলেজের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, কলেজের আয় থেকে মোটা অংকের টাকা তুলে নেন অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ। অথচ স্মাতক ও অনার্স পর্যায়ের শিক্ষকদের সামান্য বেতন দেয়া হয়। এছাড়াও কলেজে কর্মচারি নিয়োগে আর্থিক লেনদেন এবং কলেজের ফান্ড তসরুফের অভিযোগ তোলেন তারা। এ ব্যাপারে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে দুর্নীতির দায়ে কলেজের প্রিন্সিপাল এবং ভাইস প্রিন্সিপালের এমপিও বাতিল হয়েছে। আমরা চাই, বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার বিষয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জয়দেব কুমার মজুমদার বলেন,আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ খুলনা বিভাগের একটি সুনামধন্য কলেজ। দুর্নীতির দায়ে কলেজের প্রিন্সিপাল এবং ভাইস প্রিন্সিপালের এমপিও বাতিল হয়েছে। এখন তাদের ওই প্রতিষ্ঠানে রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে কলেজের সুনাম এবং পাঠদান নি¤েœর দিকে নেমে যাবে।

সে কারণে বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে নতুন করে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মালিয়া মান্নান আহমেদের কাছে ইতিমধ্যে আবেদন করেছি। কলেজের স্বার্থে বর্তমান অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে নতুন করে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের আবেদন করেছি। এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. মরিুজ্জামান বলেন, অধ্যক্ষের নিয়োগে বয়সের ঘাটতি আছে প্রায় ৭ মাস। তদন্তে এটা প্রমাণিত হওয়ায় মাউশি অধ্যক্ষের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। আর ভাইস প্রিন্সিপাল একসাথে দুই পদে চাকুরি করছেন। অথচ বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় যে আইন আছে, তা হলো পূর্বের পদ না ছেড়ে এক সাথে দুই পদে চাকুরি করা নিয়ম বর্হিভূত। এ জন্য মাউশি উপাধ্যক্ষের বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে। আর রসায়নের প্রভাষক মুসফিকুর রহমান শেখের নিবন্ধন নেই, তাই তার চাকুরি চলে গেছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের নিয়োগ অবৈধ এবং তারা সরকারি অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত। তারা চাকুরিচ্যুত হোক, সরকার বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এ ব্যাপারে রসায়নের প্রভাষক মুসফিকুর রহমানের সাথে যোগোযোগ করলে তিনি বলেন, আমার নিয়োগে ত্রুটি ছিল। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে আমাকে কলেজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপাধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ডিগ্রি তো’ তাই এমনটা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দিয়েছিল।

তার তদন্তে আমার, আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এধরণের অভিযোগে স্টপ পেমেন্ট হওয়ার কথা না। কিন্তু হয়ে গেছে। আশা করছি, দ্রুতই এর সমাধান হয়ে যাবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ তদবির মিশনে মাঠে নেমেছেন। তারা প্রায়ই কলেজে না এসে ঢাকায় দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা তাদের তদবির মিশনে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba