আজঃ বৃহস্পতিবার ১৯-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

যশোর ডাক ঘর থেকে ১ কোটি ৭৮ লক্ষাধিকর টাকা আত্মসাত !

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বৃহস্পতিবার ১০ Aug ২০২৩
  • / পঠিত : ৫০০ বার

যশোর ডাক ঘর থেকে ১ কোটি ৭৮ লক্ষাধিকর টাকা আত্মসাত !

যশোর প্রধান ডাক ঘরের সাবেক পোষ্ট মাস্টার (সহকারী পোষ্ট মাস্টার জেনারেল) আব্দুল বাকী কর্তৃক ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চালঞ্চল্যকর তথ্য। ১৭ জন গ্রাহকের পাশ বহি সংগ্রহ করে নিজ হাতে লেজার বইয়ে দফায় দফায় মোটা অংকের টাকা বসিয়ে পরে কৌশলে উত্তোলন করেছে। দুদকের তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে ১৪ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহনের পর বুধবার ৯ আগস্ট ৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।

জানাগেছে, যশোর শহরের পুরাতন কসবা (মানিকতলা ৪নং ওয়ার্ড ) এর বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিম এর ছেলে অ আব্দুল বাকী যশোর প্রধান ডাক ঘরে পোষ্ট মাষ্টার দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি,প্রতারণা,জালিয়াতি,অপরাধজনক বিশ^াসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক যশোর প্রধান ডাক ঘরের ১৭ জন গ্রাহকের নামে পরিচালিত এসবি হিসাব হতে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। সূত্রগুলো বলেছেন,আব্দুল বাকী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে। ডাক ঘর সূত্রে জানাগেছে,তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ওই অফিসে বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জুন সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মাঠ) ডাক জীবন বীমা যশোর পদে যোগদান করে। পরে তিনি বদলী হয়ে ২০২২ সালের ২জানুয়ারী পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালন কানে আব্দুল বাকী যশোর শহরের রেল রোড,রেলবাজার এলাকার মৃত আব্দুল লতিফ দেওয়ানের মেয়ে নাছিমা আক্তার শিমুর হিসাব নম্বর এসবি-২৭২০২৪ বইতে ৩০জুন ২০১৯ তারিখে ৪লাখ ৫০ হাজার টাকা লেজার বইতে ভূয়া এন্ট্রি করেন। পরে উক্ত বই থেকে ২০২২ সালে ২৫ জানুয়ারী জমাকৃত টাকা উত্তোলন করেন। এভাবে,শহরের খড়কীর জামাল হোসেনের স্ত্রী নিলুফার ইয়াছমিন এর এসবি-২৭০২৯১ তে ১৬/৬/১৯ সালে ৬লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ৭/২/২২ সালে উত্তোলন,সদর উপজেলার রাহেলাপুর গ্রামের কাইয়ূম মোল্লার ছেলে আমিনুর রহমানের

 

এসবি-২৬৩৫৩০ বইতে ২৫/৬/১৯ সালে ৬লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেখিয়ে ১৬/২/২২ উত্তোলন,শহরের পূর্ব বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড যশোরের ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলে সোহেল রানার নামে এসবি-২৭৩৭৬৯ বইতে ১০/৭/১৯ সালে ৭লাখ জমা দেখিয়ে ৩/৩/২২ ইং সালে উত্তোলন,যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের তজিবর শেখ এর ছেলে হাবিব এর এসবি-২৭৩১০৭ বইতে ২৫/৬/১৯ সালে ৮লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ২১/৩/২২ সালে উত্তোলন, আরজিনা নামের এসবি-২৭৫২৪২ বইয়ের লেজার পাতা সরিয়ে সেখানে ১০লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ১৯/৪/২২ সালে উত্তোলন, গ্রাহক সাবিনা খাতুন নামের এসবি- ২৭৫২৪৩ বইতে লেজার পাতা সরিয়ে ফেলে সেখানে ১৬লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ১১/৫/২২ সালে উত্তোলন,যশোর শহরের পোষ্ট অফিস কোয়ার্টারের পশ্চিম পাশের আলম সরদারের স্ত্রী রোজি আক্তারের এসবি-২৭৫২৪৫ বইতে ১৩/৬/২১ সালে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ২/৮/২২ সালে উত্তোলন, মিস শরীফা খাতুনের নামে এসবি-২৭৪১২৭ বইতে লেজার পাতা সরিয়ে ফেলে সেখানে ১১ লাখ টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ৩০/৮/২২ সালে উত্তোলন, যশোর শহরের নলডাঙ্গা রোডের ললিতা বিশ^াসের এসবি-২৬৪০৩৯ বইতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভূয়া এন্টি দেখিয়ে লেজার পাতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে ১৪/৯/২২ সালে উত্তোলন,যশোর শহরের পুরাতন কসবা খালেদা মঞ্জিলের শেখ কওছার আলীর মেয়ে মোছাঃ আসমা খাতুনের এসবি- ২৬৯২৪৪ বই সংগ্রহ করে ২৬/২/২০ সালে ৮লাখ ৫০ হাজার টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ৪/১০/২২ সালে উত্তোলন,শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া আমতলার আয়ূব আলীর শেখ এর স্ত্রী কমলার এসবি-২৭৪৫২৮ বইতে ১০/৩/২১ সালে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভূয়া এন্ট্রি দেখিয়ে ১৮/১০/২২ সালে উত্তোলন, আড়পাড়া শিক্ষাবোর্ড যশোরের আমজাদ শেখ এর ছেলে রেজাউল করিমের এসবি- ২৭২১৩৪ বইতে ২৩/৯/২০ সালে ১৩লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেখিয়ে ২৬/১০/২২ সালে উত্তোলন,নড়াইল জেলার পোষ্ট রতনগঞ্জ নড়াইল পশ্চিম পাড়ার আমজাদ হোসেনের মেয়ে আয়শা জেসমিন এর এসবি-২৭৫২২৫ বইতে ১৫/৯/১৯ সালে ১৫লাখ টাকা জমা দেখিয়ে ৭/১১/২২ সালে উত্তোলন,যশোর শহরের শংকরপুর ভাঙ্গাগেট এলাকার মৃত দাউদ আলী সরদারের মেয়ে রহিমা খাতুনের এসবি- ২৬৬৭২৯ বইতে ৩০/৭/১৮ সালে ৮লাখ জমা দেখিয়ে ২৯/১১/২২ সালে উত্তোলন, রুপালী নামে এক নারীর এসবি-২৬৩৯৯৪ বইতে ১৩লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেখিয়ে লেজার পাতা সরিয়ে ফেলে ২৩/১/২৩ সালে উত্তোলন ও শহরের খড়কী বামনপাড়ার আব্দুল হাইয়ের মেয়ে নাছরিন পারভীন নামীয় এসবি-২৪৩৭২৮ বইতে ১২/১২/১৯সালে ১৪ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দেখিয়ে ৩০/১/২৩ সালে আব্দুর বাকী উত্তোলন করেছেন। তিনি যোগদানের পরে প্রথম মাস থেকে টাকা আত্মসাতের পথ বেছে নেয়।

ডাক ঘর সূত্রে জানাগেছে,পোষ্ট মাষ্টারের দায়িত্ব পালন কালে তার কক্ষের সামনে কম্পিউটার অপারেটর আক্কাস শিকদার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় গ্রাহকের লেনদেনের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে কর্মরত ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার হিসেবে মোছাঃ মেহেরুন্নেছা ও পরিদর্শক পদে বর্তমানে কর্মরত পবিত্র কুমার বিশ^াস দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল বাকী দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আক্কাসের মাধ্যমে বিভিন্ন লেজার বই পরিদর্শনের নামে তার রুমে নিয়ে গ্রাহকের পাশ বই সংগ্রহ করা লেজার বইতে কলম দিয়ে টাকা জমা দেখান।

১৭ জনের পাশ বই সংগ্রহ করে উল্লেখিত টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নজরে আসেন। বিষয়টি ডাক বিভাগের খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জানানোর পর সেখান থেকে গোলাম পাটওয়ারীকে বাদি হয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর জেলা সমন্বয় দপ্তরে মামলা দিতে বলেন।

আব্দুল বাকীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পর খুলনা বিভাগীয় অফিস থেকে দূর্নীতির দায়ে দুদক আব্দুল বাকীকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। সেই থেকে পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল বাকী কারাগারে অবস্থান করছেন। আব্দুল বাকী চলতি বছরে পরিবার নিয়ে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল বলে সুত্রগুলো জানিয়েছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রধান ডাক ঘরে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৯ আগষ্ট বুধবার নতুন করে ৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। এরা হচ্ছে, বর্তমানে প্রদান ডাক ঘরে দায়িত্ব প্রাপ্ত পোষ্ট মাষ্টার মামলার বাদী গোলাম রহমান পাটওয়ারী,ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি পোস্ট মাষ্টার বর্তমানে খুলনায় কর্মরত আতিকারুল ইসলাম, ডেপুটি পোস্ট মাষ্টার (অবসর গ্রহন) আব্দুল ওয়াদুদ,কর্মরত লেজার অপারেটর শাহানুর রহমান,কম্পিউটার অপারেটর বর্তমানে খুলনায় কর্মরত আক্কাস শিকদার,সঞ্চয় ব্যাংক জমা কাউন্টার অপারেটর শেখ করিমুল্লাহ ও কর্মরত প্যাকার কাম মেইল ক্যারিয়ার আমজেদ আলী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাক্ষ্য গ্রহন করে আব্দুল বাকীর সাথে টাকা আত্মসাতের আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন বলে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছেন।#

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba