আজঃ বৃহস্পতিবার ২১-১১-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

পমপম চক্রের কব্জায় ২০ হাজার তরুণীর নগ্ন ভিডিও

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বুধবার ২৪ মে ২০২৩
  • / পঠিত : ৩৭০ বার

পমপম চক্রের কব্জায় ২০ হাজার তরুণীর নগ্ন ভিডিও

ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস করে ব্ল্যাকমেলিং করা হতো। ওইসব ভিডিও অন্তত সাত দেশে কেনাবেচা হয়েছে। তবে এই চক্রের হোতাসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- আবু সায়েম ওরফে মার্ক সাকারবার্গ, মশিউর রহমান শুভ, সাহেদ খান, কেতন চাকমা, নাজমুল হাসান সম্রাট, মারুফ হোসেন, শাহরিয়ার আফসান অভ্র, জুনাইদ বোগদাদী শাকিল ও জসীম উদ্দীন। 

চক্রের অধিকাংশ সদস্য প্রকৌশলী। দীর্ঘদিন ধরে তারা হাজার হাজার কিশোরী-তরুণীদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। তাদের কব্জায় প্রায় ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিও দিয়ে তৈরি করা ৩০ হাজার কন্টেন্টও রয়েছে। আপত্তিকর ভিডিও চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে ও ভুক্তভোগীদের আইডি হ্যাক করে সংগ্রহ করে। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটে ছড়িয়ে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া আপত্তিকর ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও বড় অংকের টাকা আয় করেছে। তাদের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার তরুণীর রাতের ঘুম হারাম হয়েছিল। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলেন তাদের অভিভাবকরা।

রাত-দিন কান্নাকাটি ও আকুতি-মিনতি করেও চক্রের সদস্যদের দিয়ে কন্টেন্ট সরাতে পারেনি তরুণীরা। উপায়ন্তর না পেয়ে বিভিন্ন তরুণী অভিযোগ নিয়ে আসেন সিআইডি’র সাইবার পুলিশের কাছে। অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পায় সিআইডি। পরে আন্তর্জাতিক একটি টেলিগ্রাম চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিআইডি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে ২৪ ঘণ্টাই পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাম চক্রের হোতাসহ নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছিলেন, তাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে পমপম নামের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ তাদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে, অর্থ দাবি করছে। অর্থ দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকা- করতে বাধ্য করছে। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে তাদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি দল কাজ শুরু করে। তারা দেখতে পায়, গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করে তা নয়, চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে।

মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্পবয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওইসব কনটেন্ট ক্রয় ও সংরক্ষণ করে থাকেন। 

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক সাকারবার্গ নামের এক ব্যক্তি। শুরুতে খুবই চতুর এই মার্ককে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। প্রযুক্তির সহায়তায় তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। মার্কের আসল নাম আবু সায়েম। তিনি শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে আরাফাত নামের এক ভুক্তভোগী এবং তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ায় রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক সাকারবার্গ ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক ওরফে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। 

মার্কের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। মার্ক ওরফে সায়েম, অভ্র ও শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি করে মার্ক সাকারবার্গের বিভিন্ন পেজের অ্যাডমিনদের আসল পরিচয় বের করা সম্ভব হয়। তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান। মশিউরের দায়িত্ব ছিল গ্রুপ থেকে কৌশলে কনটেন্ট সেভ করে রাখা এবং নানা প্রলোভনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও হাতিয়ে নেওয়া। মশিউর চট্টগ্রামের একটি ফিশিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাকে কর্ণফুলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার সহযোগী জসীমকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত আইজিপি জানান, একে একে গ্রেফতার হয় গুরুত্বপূর্ণ অ্যাডমিন ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে সাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ ও মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba