আজঃ মঙ্গলবার ১৭-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

চিকিৎসক বললেন ‘মৃত’, কবরে নামানোর আগে কেঁদে উঠলো নবজাতক

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: সোমবার ০৩ জুন ২০২৪
  • / পঠিত : ৪৫ বার

চিকিৎসক বললেন ‘মৃত’, কবরে নামানোর আগে কেঁদে উঠলো নবজাতক

ডেইলি এসবি নিউজ ডেস্ক: সাতমাস আগে বিয়ে হয় ইউনুস আলী ও জেসমিন আক্তারের। এর একমাস পর গর্ভবতী হন জেসমিন। আনন্দের সীমা ছিল না দম্পতির। চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন গর্ভে সন্তান সুস্থ আছে। হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে শনিবার (১ জুন) সকালে চিকিৎসকের কাছে গেলে আলট্রাসনো করা হয়। রিপোর্টও ভালো আসে। কিন্তু বিকেলে পুনরায় আলট্রা করলে রিপোর্ট ভালো নয়, নবজাতক মারা গেছে বলে জানান চিকিৎসক।

নেওয়া হয় ডেলিভারির প্রস্তুতি। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টনে করে বাড়িতে নেওয়া হয় নবজাতকের ‘মরদেহ’। নেওয়া হচ্ছিল কবর দেওয়ার প্রস্তুতি। এমন সময় কার্টন খুলতেই কান্না শুরু করে নবজাতক।

দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় নবজাতককে। ‘মারা যাওয়া’ সেই নবজাতক এখনো বেঁচে আছে! এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবজাতকের বাবা মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে ইউনুস আলী। তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার পেটে ব্যথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন আয়েশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, বাচ্চা ভালো আছে। তবে রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দুর্বলতা কাটাতে গ্লুকোজ স্যালাইন দেন। এরপর তার পেট ব্যথা আরও বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আলট্রা করার পর চিকিৎসক জানান, বাচ্চা মারা গেছেন।

ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘সকালে বাচ্চা সুস্থ আছেন বলে জানান ডাক্তার শারমিন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন, বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়। পরে ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা, বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, পাটিতে রাখেন বাচ্চা মারা যাবে। তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চিকিৎসাধীন।’

ইউনুস আলী বলেন, ‘বেঁচে থাকলেও আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এজন্য ডাক্তার শারমিন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী।’

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ফরহাদ আনোয়ার বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভিড় দেখে ভেতরে যাই। এরপর দেখি নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে মৃত বললো আমার বুঝে আসে না।’

এ বিষয়ে জানতে মিঠাছরা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনি বিশেষজ্ঞ শারমিন আয়েশার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসেন। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায় আমরা বলতে পারবো না।’

সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেবো, রেজিস্টারে এন্ট্রি করবো।’

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba