দুই ছাত্রদল নেতা নিহত, বিএনপি নেতা খোকনের বিরুদ্ধে মামলা

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়।

সংঘর্ষে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৭ মে) বিকেলে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল কাশেম।   গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, বিএনপি নেতা কামাল হোসের ও রাসেল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন ভুইয়ার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্য সচিব রিফাত এর বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছে। কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা নিহত সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও আন্দোলন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে  নিহত সাদেক ও মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকাপ ও ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল  করে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা।

পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিলটি ভেলানগর পার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করে। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে মাথায় গুলি করে। এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরও একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যান। এর ১ দিন পর শুক্রবার (২৬ মে) সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যায়।  সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম জানান, জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আর ৩৫-৪০ জনকে আসামিকরে মামলা দায়েল করেন নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন। এ ঘটনায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে ছাত্রদলের সভাপতি, মাঈনুদ্দিন ভুইয়াকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর থেকে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। এই জেরে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের চিনিশপুরের বাসভবন তথা জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে একাধিকবার হামলা ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।