আজঃ মঙ্গলবার ১৭-০৯-২০২৪ ইং || খ্রিষ্টাব্দ

লাভের আশায় নীলচাষ করছেন রংপুরের কৃষকরা

Posted By Shuvo
  • আপডেটেড: বুধবার ০৪ Oct ২০২৩
  • / পঠিত : ১৭৪ বার

লাভের আশায় নীলচাষ করছেন রংপুরের কৃষকরা

ডেস্ক: রংপুরের কয়েকটি স্থানে আবারও নীলচাষ শুরু হয়েছে । রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নীল চাষ করছেন কয়েক হাজার কৃষক। কৃষকেরা জানিয়েছেন, তারা এখন লাভের আশায় নীল চাষ করেন । 

এক সময় ইউরোপের চাহিদা মেটাতে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করত ব্রিটিশরা। ইংরেজ নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের চাষিরা বিদ্রোহ করেছিলেন। নীলকরদের অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে এখনও অনেক জায়গায় টিকে আছে নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। এখন দিন পাল্টেছে। নীল চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। এ নীল ইংরেজদের সেই নীল নয়। এ নীলে রক্তের দাগও নেই। একটু বাড়তি উপার্জনের আশায় স্বেচ্ছায় নীলচাষ করছেন তারা। এসব চারাও বিক্রি করতে দেখা গেছে এবারের নীলফামারীর বৃক্ষমেলায়। 

নিখিল রায় নামে এক যুবক রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়ায় ২২ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নীল তৈরির কারখানা। সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রংপুর সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার ও তারাগঞ্জ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়ায় অবস্থিত কারখানায় যাওয়ার পথে সড়কের দুই ধারে বিস্তীর্ণ এলাকায় চোখে পড়ে নীলক্ষেত। 

নিখিলের নীল তৈরির কারখানায় দেখা গেছে, গ্রামের ২৫-২৬ জন নারী সেখানে নীল তৈরিতে ব্যস্ত। 

নীল বিদ্রোহের পর নীল চাষ বন্ধ হলেও রংপুর অঞ্চলে নীলগাছ বিলুপ্ত হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে রংপুর ও নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় নীলচাষ হয়। স্থানীয় ভাষায় নীলকে বলে ‘মালখড়ি’। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কৃষকেরা জমিতে নীলগাছ লাগিয়ে রাখতেন। 

আর বর্তমানে নীল চাষে যুক্ত কৃষকরা জানান, গাছের যে কোনো অংশ মাটিতে পড়ে পচে গিয়ে প্রাকৃতিক সারের কাজ করে। নীলগাছ জমির নাইট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রেখে উর্বরতা বাড়ায়।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি নীলের বীজ বুনতে হয়। নীল অনেকটা ধইঞ্চা গাছের মতো, এতে তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। বীজ বোনার ৯০ দিন পর পাতা কাটার উপযোগী হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে নীলের পাতা কাটা শুরু হয়। আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনবার গাছ থেকে পাতা কাটা হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহের জন্য গাছগুলো জমিতেই থাকে। অক্টোবর মাসে বীজ সংগ্রহ করা হয়। নীলগাছের মাথা থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডাল পাতাসহ কাটতে হয়। পাতা কাটার পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে পানিতে জাগ দিতে হয়। বড় চৌবাচ্চায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পাতা জাগ দেওয়ার পর একটি নির্যাস পাওয়া যায়। পরে আরেক চৌবাচ্চায় পাতার সবুজ রঙের গাদকে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা অক্সিডাইজেশন করতে হয়।

এসময় সবুজ রঙের গাদ বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নীল রঙের গাদে পরিণত হয়। সেটি সাদা মার্কিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর নীল রোদে শুকানো হয় অথবা জ্বাল দেওয়া হয়। এখান থেকে কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়। নীল তৈরিতে বিভিন্ন ধাপে সময়ের হেরফের হলে নীলের গুণগত মানের তারতম্য ঘটে। নীলগাছের ২৫০ কেজি সবুজ পাতা থেকে এক কেজি নীল পাওয়া যায়। এক সময় নীল রংয়ের একমাত্র উৎস ছিল এ নীলগাছ।


নিখিল রায় বলেন, আমি এসএসসি পাস করার পর ২০০২ সালে পল্লী চিকিৎসকের কোর্স করি। এরপর নিজ গ্রামে বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দিতাম। ২০০৩ সালে এলাকার দরিদ্র নারী-পুরুষদের নিয়ে চালু করি হস্ত কুটিরশিল্প প্রশিক্ষণ কল্যাণকেন্দ্র। ২০০৬ সালে ‘এমসিসি বাংলাদেশ’ নামক একটি সংস্থায় নীল তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সংস্থাটির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় শুরু করি পাতা থেকে নীল তৈরির কাজ। বর্তমানে আমার কারখানার তালিকাভুক্ত চাষি ৭২০ জন। তারা প্রায় ২৫০ একর জমিতে নীলের চাষ করেন। আরও অন্তত ৩৯০ জন সাধারণ চাষি রয়েছেন। তারা ১২৫ একর জমিতে নীল চাষ করেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ব্রিটিশ আমলে রংপুর অঞ্চলের চাষিরা নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নীলচাষ বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। এখন নিখিলের বদৌলতে রংপুর অঞ্চলের অনেক নীলচাষির মুখে হাসি ফুটছে। 

নিখিলের কারখানায় প্রতি কেজি পাতা চার টাকা দরে কেনা হয়। এ হিসাবে এক একর জমির নীলগাছের পাতার দাম দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। তা ছাড়া প্রতি একর জমির শুকনা নীলগাছ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি হয় নয় থেকে ১০ হাজার টাকায়।

ট্যাগস :

শেয়ার নিউজ


নিউজ কমেন্ট করার জন্য প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে লগইন করুন

© All rights reserved © "Daily SB NEWS"
Theme Developed BY Global Seba